এস আলমমুক্ত হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ নিজেই ছিলেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। ব্যাংকটিতে পরিচালক ছিলেন তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন। পাশাপাশি এস আলমের বোন আতিকুর নেসা, ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ হাসানও ব্যাংকটির পরিচালক ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে পাঠানো এক আদেশে বলেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।

আদেশে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিত করা ও জনস্বার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে পরিচালনা পর্ষদ নতুনভাবে গঠনের জন্য পাঁচজনকে পরিচালক ও স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নতুন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নানকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য চার স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আজিজুর রহমান, উত্তরা ব্যাংকের সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল কুদ্দুছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইফুল আলম এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট মো. রাগিব আহসান।  

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার কিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও তাঁর পরিবারের এক সদস্যকে ওই ব্যাংকের পরিচালক করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর সেই শেয়ারের হস্তান্তর হয়েছে, কিন্তু ব্যাংকের ঋণ শোধ হয়নি। এই ঋণসহ এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ঋণ বছরের পর বছর পার হওয়ার পরও আদায় হয়নি, আবার এসব ঋণকে খেলাপি হিসেবেও দেখানো হয় না। ফলে ব্যাংকটি তারল্য সংকটে পড়েছে। ব্যাংকটি থেকে টাকা তুলতে পারছেন না গ্রাহকেরা। কর্মকর্তাদের বেতন হলেও তাঁরা টাকা তুলতে পারছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে থাকা চলতি হিসাবে গত ২৭ আগস্ট ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংকটির অনিয়ম প্রকট হওয়ায় গত বছর ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে তাতেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, উল্টো অবস্থা খারাপ হয়েছে।

এস আলম গ্রুপ ২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপের কাছ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ। এস আলম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ব্যাংকটি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। ব্যাংকটির ঋণ প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্টদের দখলে।
 
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও সাতটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দিয়েছে। এগুলো হলো – ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউসিবি এবং এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ এস আলমের দখলে থাকা ছয়টি ব্যাংক মুক্ত হলো।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৯৯৯ সালে প্রচলিত ধারার সুদ ভিত্তিক ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরিত হয়। এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল এমন অন্যান্য ব্যাংকের পর্ষদ ইতিমধ্যে পুনর্গঠন করা হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *