■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
জনপ্রিয় অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ফ্লাইট এক্সপার্ট (Flight Expert) তাদের কার্যক্রম হঠাৎ সম্পূর্ণ বন্ধ করে মালিকপক্ষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, পর্যটন এজেন্সি, বিটুবি এজেন্ট ও গ্রাহকদের শতকোটি টাকার পাওনা না দিয়েই কোম্পানিটি বন্ধ করে এর মালিকেরা কানাডায় চলে গেছেন।
শনিবার সকাল থেকে ফ্লাইট এক্সপার্টের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ বন্ধ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানিটি বন্ধ করে এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সালমান বিন রশিদ শাহ সাইম ও তাঁর বাবা মক্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট গোপনে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন।
অনেকে এরই মধ্যে টাকা পরিশোধ করেও টিকিট, হোটেল বুকিংসহ অন্যান্য সেবা পাননি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা আইএটিএর (IATA) কাছে বিশাল অঙ্কের অর্থ বকেয়া রেখেছে ফ্লাইট এক্সপার্ট।
২০১৭ সালের মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করা ফ্লাইট এক্সপার্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি খাতে পরিচিত নাম হয়ে ওঠে। কোম্পানিটি বিমানের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজারভেশন, ট্যুর প্যাকেজ, ভিসা সহায়তাসহ নানা সেবা দিত।
এর আগে হালট্রিপ এবং টোয়েন্টিফোরটিকেটিডটকমের মতো অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সিও গ্রাহকের অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটলেও পর্যাপ্ত নজরদারি বা নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা না থাকায় বিপদে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
ফ্লাইট এক্সপার্টের সেলস ডিপার্টমেন্টের একজন মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘গত রাতেই আমাদের মালিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আমরা এখন মতিঝিল থানায় যাচ্ছি।’
এদিকে ফ্লাইট এক্সপার্টের সিওও সালমান তাদের অফিসের অভ্যন্তরীণ একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে লিখেছেন, সাঈদ, হোসাইন এবং সাকিব তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।তারা খুব সতর্কতার সাথে পরিকল্পনা করে গত বৃহস্পতিবারের মিটিংয়ে এসব দোষ তার (সালমানের) ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ছিল এবং সালমানকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। আজ সকালে তারা ৩ কোটি টাকা বা তার কম টাকা তুলে নিয়েছেন এবং তা নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ, কম্পানিটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে।
সালমান আরো জানিয়েছেন যে, তার দিকে আসা হুমকি এবং দোষারোপের কারণে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি ছুটি নিয়েছেন। এই পরিস্থিতির জন্য তিনি দুঃখিত এবং বলেছেন যে এভাবে চলে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তার ছিল না।
এদিকে ফেসবুকে অনেকেই লিখেছেন, ফ্লাইট এক্সপার্ট মালিক গতরাতেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
ফ্লাইট এক্সপার্টের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের সর্বশেষ পোস্ট ছিল হজ নিয়ে। সেই পোস্টে হজ ২০২৬-এর রেজিস্ট্রেশন শুরু জানিয়ে হজ প্যাকেজের মূল্য ছাড়া হয়েছে।
জয়িতা আফ্রিন নামে একজন প্রশ্ন করে লিখেছেন, ফ্লাইট এক্সপার্টের মতো ট্রাস্টেড কম্পানি যদি দেশ থেকে পালিয়ে যায় তাহলে আর কাকে বিশ্বাস করব?
প্রতিষ্ঠানটি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন, ট্যুর প্যাকেজ এবং ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মতো নানা ধরনের সেবা দিত। বিশেষ করে, সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্লাইট টিকিট বুক করার সহজ সুবিধার কারণে এটি গ্রাহকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার, ডিসকাউন্ট এবং সহজে পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।