সাবেক সিইসি নূরুল হুদা ও হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার পর এবার আরেক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেফতার করেছে করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রোববার (২২ জুন) রাত ১১টায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।

ডিবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কাজী হাবিবুল আউয়ালের নামে শেরেবাংলা নগর থানায় নির্বাচন জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যে মামলায় সাবেক সিইসি নুরুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ওই মামলায় তাকেও গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সোমবার দুইজনকে আদালতে হাজির করা হবে।

এর আগে, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় বাসার সামনে স্থানীয় জনগণ তাকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। খবর পেয়ে পরে পুলিশ তাকে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়ে যায়।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে তার উত্তরার বাসা থেকে ধরে নিয়ে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে ভিডিও করার পর পুলিশে দেওয়া হয়েছে। পরে সেখান থেকে সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে গ্রেফতার দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ডিবি হেফাজতে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উত্তরা পশ্চিম থানারা পাঁচ নম্বর সেক্টরের বাসা থেকে তাকে আটক করার কথা জানিয়েছিল উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

আওয়ামী লীগের দলীয় ও একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ২০২৪ সালে নির্বাচন করে ‘আমি-ডামি ভোট’ উপাধি পায় কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। ওই কমিশনের বেশিরভাগ কার্যক্রম নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।

ওই নির্বাচনে ভোটের হার নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি হয়। ভোটের দিন বেলা ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ ভাগ ভোট পড়ে বলে জানানো হলেও এক ঘণ্টার ব্যবধানে ভোটের হার ৪০ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়। অবশ্য ভোটের হার ঘোষণার সময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রথমে ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বলে পরে তা সংশোধন করে ৪০ শতাংশের কথা বলেন

রোববার (২২ জুন) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ, কেএম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। এতে তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারদের পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল সকালে থানায় ওই মামলার অভিযোগপত্র দেন।। মামলা নম্বর-১১। মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার আসামিরা হলেন— সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার মো. আব্দুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, তৎকালীন পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার, সাবেক ডিজি র‍্যাব ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান (নাম অজ্ঞাত), সাবেক এনএসআই প্রধান ও সাবেক ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল আলম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমান ও তৎকালীন নির্বাচন সচিব (নাম অজ্ঞাত)।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক আমলা নূরুল হুদা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

তার দায়িত্ব পালনকালে রাতের ভোট হিসেবে পরিচিত ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনসহ অসংখ্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ছিল নানা প্রশ্ন। যে কারণে নানা সমালোচিতও ছিলেন তিনি।

সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত ওই ভোটে আগের রাতে ভোট দেওয়ার অভিযোগ ছিল। যে কারণে সিইসি হুদাকে অনেকেই রাতের ভোটের সিইসি হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন।

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসির মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে হেনস্তা করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। ‘মব’ সৃষ্টি করাকে ফৌজদারী অপরাধ আখ্যায়িত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আবারও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

রোববার (২২ জুন) রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান তুলে ধরে সরকার।

বিবৃতিতে বলা হয়, রোববার, ২২ জুন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এসময় ‘মব’ কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। অভিযুক্ত সকল ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে এবং বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ। ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল নাগরিককে সহনশীল ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *