:: কলকাতা প্রতিনিধি ::
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রয়াত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সকালে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার বালিগঞ্জে পাম অ্যাভিনিউয়ে নিজ বাড়িতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক সন্তান রেখে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি।
সকালে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। সকালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রাতঃরাশ করেছিলেন। তার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই খবর পাওয়ার পর রাজনৈতিক নেতা–নেত্রীরা সেখানে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছেন।
বুদ্ধদেব দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। গত বছরের জুলাইতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত বুদ্ধদেব কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে বেশ কয়েকদিন ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে মারাত্মক সংক্রমণ ধরা পড়লেও ১২ দিন পর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরেন। এরপর থেকে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে জীবন কাটাতে হচ্ছিল তাকে।
২০২১ এর মে মাসে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। তখনও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। চিকিৎসায় পরে কোভিড মুক্ত হয়েছিলেন।
ভারতের বিজেপি সরকার তাকে রাষ্ট্রীয় খেতাব পদ্মভূষণে সম্মানিত করতে চাইলেও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
দীর্ঘ পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রথমে কাশীপুর-বেলগাছিয়া আসনের বিধায়ক ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৭ সালে যাদবপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ান। ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন বুদ্ধদেব।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্ম ১৯৪৪ সালের ১ মার্চ, কলকাতায়। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর চাচা। রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাতেও সমান আগ্রহ ছিল বামপন্থী এই নেতার। শৈলেন্দ্র সরকার বিদ্যালয় থেকে স্কুল জীবন শেষ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর সরকারি স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন।
১৯৬৬ সালে সিপিএমের প্রাথমিক সদস্যপদ নেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৯৭২ সালে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েন প্রথমবার। তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা সবগুলো বিধানসভা নির্বাচনে জিতেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তর সামলেছেন তিনি। তথ্য সংস্কৃতি দপ্তর থেকে পর্যটন, নগরোন্নয়ন—কখনো পূর্ণ মন্ত্রী আবার কখনো আবার সাময়িকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১৯৯৬ সালের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯৯ সালে উপমুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু অবসর নেওয়ার পর ২০০০ সালে মুখ্যমন্ত্রী হন বুদ্ধদেব। ১০ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে তার দেহ বাড়িতে রাখা হবে আত্মীয়-বন্ধুদের শ্রদ্ধা জানাবার জন্য। শুক্রবার সকালে তা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের দলীয় অফিসে আনা হবে। সেখান থেকে শুরু হবে শেষ যাত্রা। সেলিম জানিয়েছেন, বুদ্ধবাবু দেহদান করে গিয়েছিলেন। সেইমতো এসএসকেএম হাসপাতালে দেহ দান করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেছেন, ”বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আকস্মিক প্রয়াণে আমি মর্মাহত। বিগত কয়েক দশক ধরেই আমি তাঁকে চিনতাম এবং গত কয়েক বছরে তিনি যখন অসুস্থ ছিলেন তখন আমি কয়েকবার তাঁকে বাড়িতে দেখতে গেছি। এই মুহূর্তে আমি খুব দু:খিত বোধ করছি। এই শোকের সময়ে মীরাদি এবং সুচেতনের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই। আমি সিপিআই(এম) দলের সকল সদস্য-সদস্যা, সমর্থক এবং তাঁর সমস্ত অনুগামীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”