■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
রাজধানীর আশুলিয়া থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে শাফি মোদ্দাসের খান জ্যোতির ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি শেষে বিচারক সাইফুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
এর আগে দুপুরে জ্যোতিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু তাহের মিয়া।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (এআইইউবি) শিক্ষার্থী রবি-উস-সানি শিপু বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলার ৪ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি জ্যোতি।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ৪ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে ঢাকার আশুলিয়ায় বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হন মামলার বাদী।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন জানান, ছাত্র আন্দোলনের সময় গোলাগুলিতে একাধিক আহতের ঘটনায় ভুক্তভোগী এক পরিবারের দায়ের করা মামলায় (মামলা নং ২৬) গ্রেফতার করা হয়েছে জ্যোতিকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হবে জ্যোতিকে।
এ মামলার উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইউজিসির সাবেক সচিব ড. ফেরদৌস জামান, সাবেক সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীর, ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র, ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।
এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে জ্যোতিকে ঢাকা জেলা পুলিশ গ্রেফতার করে বলে জানান পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ।
১ সেপ্টেম্বর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, তাঁর ছেলে শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতিসহ ১০ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দিয়েছিলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে ১৬৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪৭টিই হত্যা মামলা। বেশির ভাগ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, সাফি মুদ্দাসিরকে মেসার্স তিতাস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নামে একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বানিয়ে রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই প্রতিষ্ঠানের নামেই চলত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি। টেকনাফের মিঠাপানির ছড়া ১নং প্লটে ৫ দশমিক ৫০৬৪ একর জমি কেনা হয়। তাছাড়া লেঙ্গুরবিল মৌজায় একই কোম্পানির নামে লম্বরি ২নং পর্টে কোম্পানির নামে কেনা জমির মূল্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু অমুছনীয় কালি কিনতেই ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় করে সাফি মুদ্দাসির সিন্ডিকেট। এছাড়া আরও ৬ কোটি টাকার অমুছনীয় কালি কেনে নির্বাচন কমিশন। যার টেন্ডার বাগিয়ে নেয় সাফি ও নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয়ের যৌথ সিন্ডিকেট।
রাজধানীর পুরো ধানমন্ডি এলাকায় রেস্টুরেন্ট দেওয়ার জন্য সাফি মুদ্দাসিরকে দিতে হতো ১ থেকে ২ কোটি টাকা। টাকা দিলে কোনো রকম যাচা-বাছাই ছাড়াই মিলত লাইসেন্স। আর লাইসেন্স করতে বাবার প্রভাব খাটাতেন তিনি। শুধু তাই নয় এসব রেস্টুরেন্ট থেকে যেসব চাঁদা নেওয়া হতো তাও একহাতে সামলাতেন সাফি মুদ্দাসির।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে শুধু রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকেই প্রতিদিন দেড় কোটি টাকার চাঁদা তোলা হতো। ফুটপাতে ব্যবসা, বাজার, মাদক ব্যবসায়ী ও আবাসিক হোটেল থেকে উঠানো হতো এসব চাঁদা। এ টাকা মন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেনসহ আরও দুইজনকে। এই টাকার মোটা অংশ পেতেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। পাশাপাশি এই টাকার একটা ভাগ পেতেন তার ছেলেও।