■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ৩ টা ১৫ মিনিটে নিজের প্রতিষ্ঠিত উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়ে এবং নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রেস সচিব জাহাঙ্গীর আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ছেলে মাহী বি. চৌধুরী তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়ায় গত ২ অক্টোবর সকালে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেদিন তার মেয়ে ডা. শায়লা চৌধুরী জানান যে, তার বাবা আগে থেকেই স্কিমিক হার্ট ডিজিজেস ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
খ্যাতিমান চিকিৎসক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ বদরুদ্দোজা চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে (প্রখ্যাত মুন্সেফ বাড়ি) নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মজিদপুর দয়াহাটায়। তার বাবা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
বি. চৌধুরী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের অনুরোধে ১৯৭৮ সালে রাজনীতি শুরু করেন। তিনি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে ১৯৭৯ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালের ২৯ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রাম সফরের অন্যতম সফরসঙ্গী ছিলেন। ৩০ মে ভোরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নিহত হন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশের রুমে বি চৌধুরীর অবস্থান ছিল। ১৯৯১ সালে তিনি দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী ও পরে সংসদ উপনেতা হন। ১৯৯৬ সালে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতার দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০১ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একই বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
২০০৪ সালের ৮ মে বি. চৌধুরী বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি দলটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তার সহধর্মীনির নাম হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী। অধ্যাপক চৌধুরী দুই মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। তার বড় মেয়ে মুনা চৌধুরী পেশায় একজন ব্যারিস্টার। ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী পেশায় চিকিৎসক এবং ঢাকার উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করেন। একমাত্র ছেলে মাহী বি. চৌধুরী রাজনীতিবিদ।
চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন বদরুদ্দোজা
রাজনীতিতে সক্রিয় হবার আগে থেকেই চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন বদরুদ্দোজা।
এছাড়া ভালো ছাত্র এবং উপস্থাপক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি।
প্রয়াত সংসদ সদস্য এবং লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী পান্না কায়সার সম্পর্কে বদরুদ্দোজার আত্মীয়।
তিনি এডিনবার্গ, লন্ডন ব্রোম্পটন চেস্ট ইন্সটিটিউট, লন্ডনের হ্যামার স্মিথ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণ করেন।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন, পরবর্তীতে তিনি একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
রাজনীতির বাইরে তিনি চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
‘টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড চেস্ট ডিজিজ’ নিয়ে বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের হয়ে যোগ দিয়েছেন, এবং এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বাংলাদেশে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নামে তার প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রাস্টের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
এই ট্রাস্টের মাধ্যমে দেশের প্রথম মহিলা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি নিজের চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখতেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা সম্পন্ন
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার প্রতিষ্ঠিত উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এ জানাজা হয়।
এরপর বাদ জোহর বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার ৮ নম্বর সড়কে অবস্থিত বায়তুল আতিক জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ ঢাকাতেই সংরক্ষণ করা হবে।
রোববার সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ নিজগ্রাম মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে নেওয়া হবে। সেখানে সকাল ১০টায় শ্রীনগর স্টেডিয়ামে তৃতীয় জানাজা এবং বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়াহাটায় চতুর্থ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
গত ২ অক্টোবর বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার তথ্য জানান ছেলে মাহী বি চৌধুরী। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর ৩টা ১৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক
সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ক্ষতি হলো, তা অপূরণীয়।
বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন রাষ্ট্রপ্রধান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।