■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ইমরান হোসেন হত্যা মামলার ঘটনায় সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধায় রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ৮৩৩ নম্বর রুম থেকে সুজনকে গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় আসামি হিসেবে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
গত ১ সেপ্টেম্বর ইমরান হোসেনের মা কোহিনূর আক্তার বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি করেন। মামলা নম্বর-৬।
মামলার বাদী কোহিনূর আক্তার এজাহারে লিখেছেন, তার ছেলে ইমরান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
ইমরান হোসেন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনসহ ২৯৭ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সকাল ৯ টায় যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র ও সাধারণ জনতার আন্দোলনে যান ইমরান। তখন আন্দোলনকারীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানকে নস্যাৎ করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আসামিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপর্যুপরি এলোপাতাড়ি গুলি, পেট্রোলবোমা, ককটেল বিস্ফোরণ, হাতবোমা ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ইমরান গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
মামলার আরও আসামিরা হলেন- সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী ও মোখলেছুর রহমান বাদল, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহের হোসেন সাজু, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, একাত্তর টিভির সাবেক উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা, সময় টেলিভিশনের তৎকালীন উপদেষ্টা মোরশেদুল ইসলাম, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, একাত্তর টিভির সাবেক বার্তা প্রধান সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাংবাদিক নজরুল কবীর, সময় টেলিভিশনের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, এটিএন নিউজের সাবেক বার্তাপ্রধান মুন্নী সাহা, একাত্তর টিভির সাবেক সাংবাদিক ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুও তার মেয়ে তারিন হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সালমান এফ রহমানও এ মামলার আসামি।
নুরুল ইসলাম সুজনের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘিতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুবলীগের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সুজন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
নুরুল ইসলাম সুজন ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম অংশগ্রহণ করেন। তখন নুরুল ইসলাম পরাজিত হন। সে সময় পঞ্চগড়-২ আসনে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী মোজাহার হোসেন।
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নূরুল ইসলাম সুজন। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের প্রার্থী এমরান আল আমিনকে পরাজিত করে দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নতুন সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর নূরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী তিন সন্তানের জননী নিলুফার ইসলাম অসুস্থতায় ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ভোটের পরদিন তার দাফন সম্পন্ন হয়।
সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন ২০২১ সালের ৫ জুন ৬৫ বছর বয়সে ৩৬ বছর বয়সী আইনজীবী শাম্মী আকতার মণির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে।
২০১১ সালে মণির প্রথম বিয়ের বিচ্ছেদ হয়। তার একটি মেয়ে আছে। রেলমন্ত্রীর আগের তিন সন্তানের সঙ্গে আরও এক সন্তান যোগ হলো। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মণি দ্বিতীয়।