■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
তিন বছর ছয় মাস পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা ৩৫ মিনিটে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন।
এরপর একটি প্রাইভেটকারে করে সরাসরি চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। এসময় কারাফটকে অপেক্ষমান গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে যান বাবুল আক্তার।
বাবুল আক্তারের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান লাবু বলেন, রাত ৮টার ফ্লাইটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বাবুল আক্তার। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ইস্কাটন এলাকার বাসায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
জেল গেটে বাবুল আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের জামিন আদেশ এবং আদালতের জামিন পরোয়ানা পাঠানোর পরেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি তিনদিন ধরে। এ বিষয়ে আমি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তা গ্রহণ করেনি। পরে ডাকযোগে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছি। সেখানে বাবুল আক্তারকে বেআইনি আটক করে রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেছি।
তিনি আরও বলেন, আইনের ধারা অনুযায়ী, প্রতিটি ঘণ্টা হিসাবে বেআইনিভাবে আটক করে রাখার শাস্তি এক বছরের কারাদণ্ড। এ ছাড়াও আদালতের আদেশ অমান্য করে কর্তৃপক্ষ আদালত অবমাননা করছে। আদালতের মুক্তি পরোয়ানা পেয়েও কার হুকুমে কারা কর্তৃপক্ষ বন্দি করে রেখেছে তা একমাত্র তারাই জানেন। এই বেআইনি আটকের জন্য বাবুল আক্তার চাইলে মামলাও করতে পারেন।
বাবুলকে আজই মুক্তি দেওয়া হবে এমন খবর পেয়ে বিকাল চারটার দিকে কারা সীমানার মূল ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকেন বাবুলের স্ত্রী ইশরাত জাহান মুক্তা (মিতুর মৃত্যুর পর বিয়ে করেন) খালাতো ভাই আবদুল মাজেদসহ আরও কয়েকজন আত্মীয় অভ্যর্থনা কক্ষে বাবুলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
আবদুল মাজেদ জানান, গত তিনদিন ধরে তিনি এবং বাবুল স্ত্রীসহ আরও অনেক আত্মীয় চট্টগ্রাম শহরের একটি আবাসিক হোটেলেই থাকছিলেন।
গত ২৭ নভেম্বর বাবুল আক্তারকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। মিতুর বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান।
জামিন পেলেও গত বৃহস্পতিবার বাবুলের জামিননামা স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন তার শ্বশুর ও মামলার বাদী মোশাররফ হোসেন। শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করা হলেও আদেশের তারিখ পিছিয়ে যায়। বুধবার শুনানি শেষে তার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালত তার জামিন বহালের আদেশ দেন।
গত ১৪ আগস্ট চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন বাবুল আক্তার। পরে ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন জামিন নামঞ্জুর করেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে মামলায় স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন তাকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওই দিনই মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন আদালত। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ সাত জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
গত বছরের ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য পর্যায়ে রয়েছে।