ছাত্রলীগের হামলায় চট্টগ্রাম ও ঢাকায় নিহত ৪

:: নাগরিক প্রতিবেদন ::

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় তিনজন এবং ঢাকায় একজন নিহত হয়েছে। চট্টগ্রামে তিনজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। 

মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জানান, তিনজনের মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রয়েছে। 

নিহত দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে।  তারা হলেন- চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরাম ও ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী ফারুক। নিহত অন্যজন ফয়সাল আহমেদ শান্ত।  তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া এলাকার বাসিন্দা। ফয়সাল আহমেদ শান্ত নগরের এমইএস কলেজের ছাত্র। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, আন্দোলনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত অন্তত সাত থেকে আটজন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। তারা বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। 

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আহত হয়ে অন্তত ৭১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৭১ জনের চিকিৎসা নেওয়ার হিসাব পাওয়া গেছে। 

এরমধ্যে চাঁনখারপুল এলাকার তিনজনসহ অন্তত সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকা কলেজ এলাকার সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। 

ছাত্রলীগের হামলায় চট্টগ্রামে ও ঢাকায় নিহত ৪

শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বিকাল সোয়া ৩টায় নগরের মুরাদপুরে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে। 

শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল সোমবার বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটায় কর্মসূচি ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনে। তবে এর আগে থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে ষোলশহর রেলস্টেশনে অবস্থান নেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে খণ্ড খণ্ড জমায়েতে শিক্ষার্থীরা ষোলশহরের দিকে আসতে থাকেন। আসার পথে মুরাদপুরে একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুরুতে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করলেও পরে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ শুরু হয়। কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পরে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। 

সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে নগরের ব্যস্ততম সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষ এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অংশ অলিগলিতে ঢুকে পড়লে সেখান থেকেও খুঁজে বের করে হামলা করা হয়েছে।

ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে এক যুবক (২৫) নিহত হয়েছেন অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বিকালে এ ঘটনা ঘটেছে।

লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম–পরিচয় জানা যায়নি।

পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. রিফাতুল ইসলাম জানান, বিকালে ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় এক দল লোককে এক ব্যক্তিকে পেটাতে দেখেছেন তারা। পরে শুনেছেন তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ঢাকা কলেজের রাস্তা থেকে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। তখন চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

আকাশ ও মামুন নামে দুই পথচারী রক্তমাখা অবস্থায় এক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসেন। ঢাকা কলেজের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল করে যাওয়ার সময় তিনি হামলার শিকার হন। তার পরনে ছিল কালো প্যান্ট ও গেঞ্জি। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। 

ওই যুবকের পরনে জিন্সের প্যান্ট ও সাদা গেঞ্জি রয়েছে। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার মাথায় আঘাত রয়েছে।

সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা ২টার দিকে ওই মিছিলে হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে ওই এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

ঢাকা কলেজ ফটকের সামনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হাতে রামদা, রড, লোহার পাইপ, লাঠি নিয়ে সকাল থেকেই অবস্থান নেন। খানিক দূরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। দুপক্ষের মধ্যে ইট–পাটকেল নিক্ষেপ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিজিবি মোতায়েন

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের খবর আসছে। শেষ খবর পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *