হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

২০২৬ সালে পবিত্র হজ পালনে যেতে ইচ্ছুকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই প্যাকেজগুলোর খরচ সর্বনিম্ন ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে প্যাকেজগুলো ঘোষণা করেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

উপদেষ্টা জানান, হজ প্যাকেজ ১ (বিশেষ)-এ হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গণ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। এটাচড ৬ বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ৫ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ডি+ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৬ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।

ধর্ম উপদেষ্টা জানান, হজযাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই বিমান ভাড়া কমানো হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ৭০ বা ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের হজে যেতে হলে ৫০ বছরের নিচে একজন সঙ্গী নিতে হবে। এছাড়া সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কেউ হজে অংশ নিতে পারবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সনের ২৬ মে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন। 

গত ২৭ জুলাই থেকে হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে এবং সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১২ অক্টোবর হজের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে।

১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি ২০২৬ সালের হজে গমন করতে পারবেন। তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ আবশ্যিকভাবে জমা দিতে হবে।

এতে আরও জানানো হয়, আগামী ৯ নভেম্বর হজ চুক্তি সম্পাদিত হবে। ২০২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হবে। আর হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।

হজ প্যাকেজ ২ হজ প্যাকেজ ১ এর চেয়ে কিছুটা সুলভ হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গণ থেকে ১.২ কিলোমিটার থেকে ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। এটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ডি ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবেপ্রস্তাবিত তিনটি মধ্যে প্যাকেজের মধ্যে প্যাকেজ ১-এর খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ পাঁচজনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি+’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে।

প্যাকেজ ২-এর খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে ১.২ কিলোমিটার থেকে ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাপাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে।

হজ প্যাকেজ ১ ও হজ প্যাকেজ ২ এ নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মক্কা ও মদিনায় ২ ও ৩ সিটের রুম আপগ্রেডেশন ও শর্ট প্যাকেজ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরব অবস্থানকাল হবে সাধারণত ৩৫-৪৭ দিন। তবে শর্ট প্যাকেজে সৌদি আরবে অবস্থানকাল হবে ২২-৩০ দিন।

আর হজ প্যাকেজ ৩-এর খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা। এটি সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন হবে মক্কায় আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার বাইরে। একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। হারাম শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যাতায়াতের নিমিত্ত এসি বাসের বন্দোবস্ত থাকবে।

উপদেষ্টা বলেন, এই প্যাকেজটি সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য নতুন সংযোজন। এর আগে কখনও সরকারি মাধ্যমে হাজীদের জন্য আজিজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ হজযাত্রী প্রেরণকারী তিনটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার হজযাত্রীদেরকে বহু বছর ধরে আজিজিয়া এলাকাতেই রাখা হয়। এছাড়া, আমাদের দেশের হজযাত্রীদেরকে দীর্ঘ বছর যাবৎ যে এলাকায় রাখা হতো এই এলাকার হোটেল বা বাড়িগুলো সৌদি সরকার ভেঙে ফেলেছে। এ কারণে আগামীতে আমাদের দেশের হজযাত্রীদেরকে আজিজিয়া এলাকায়ই রাখতে হবে।

এদিকে, হজ এজেন্সিসমূহের জন্য ‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এই প্যাকেজটি গ্রহণ করে এজেন্সিসমূহ অতিরিক্ত দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। প্রত্যেক হজযাত্রীর খাবার বাবদ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল ব্যয় হতে পারে। সে অনুসারে বেসরকারি প্যাকেজের যাত্রীদের খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা সঙ্গে নিতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে খাবার ক্রয় করতে হবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *