গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাবিত আইনে গুম করার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশটির খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের বরাতে এ তথ্য জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ অধ্যাদেশে আওতায় গুমের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা বলেছি সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’

তিনি আরও বলেন, ‘গুমের সঙ্গে জড়িত কেউ যদি কনভিকটেড হন, সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’

প্রেস সচিব বলেন, গুম প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য একটা আইন নিয়ে অনেকদিন যথেষ্ট ডিবেট হয়েছে। এরপর আজকে এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হয়েছে। এই অধ্যাদেশে গুমকে সংজ্ঞায়নের পাশাপাশি চলমান অপরাধ, কন্টিনিউ অফেন্স হিসেবে বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গোপন আটক কেন্দ্র স্থাপন, যা আয়নাঘর নামে পরিচিত, তা ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত কমিশনকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্তের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশে গুম প্রতিকারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের ১২০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্নের বাধ্যবাধকতা, ভুক্তভোগী-স্বাক্ষীর অধিকার সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ এবং আইনগত সহায়তা নিশ্চয়তা প্রদান সংক্রান্ত বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া, গুম প্রতিরোধ প্রতিকার এবং সুরক্ষার উদ্দেশ্যে তহবিল গঠন এবং তথ্যভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার বিধানও সংযোজিত হয়েছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সময় বাংলাদেশে হাজার-হাজার ছেলেমেয়ে গুম হয়েছে। তার মধ্যে গুম বিষয়ক যে কমিশন করা হয়েছে, সেখানে অভিযোগের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার এবং ওই কমিশনে যারা মেম্বার আছেন, তারা তাদের রিপোর্টে বারবার বলছেন যে এটার সংখ্যা চার হাজারের উপরে হবে। আর দেশে শতশত আয়নাঘর ছিল, সেখানে এদেরকে রাখা হতো। অনেকে যারা গুম হয়েছেন, কেউ কেউ ফিরে এসেছেন, আবার অনেকে ফিরে আসেননি। আপনি জানেন বিএনপির অনেক কর্মী এখনো ফিরে আসেননি।

তিনি আরও বলেন, গুম সংক্রান্ত একটি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন আছে। যেটার নাম হচ্ছে, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোরস ডিসএপিয়ারেন্স। গত বছর ২৯ আগস্ট বাংলাদেশের উপদেষ্টা পরিষদ এটার এপ্রুভ করেছেন। বাংলাদেশ এটার অংশীদার হয়েছে। অংশীদারের এই কনভেনশনকে ফলো করে অধ্যাদেশটা তৈরি করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক আইন। এর ফলে বাংলাদেশে আর কোনো ফ্যাসিস্ট সরকার এসে গুমের রাজত্ব চালাতে পারবে না। দেশে কোনো আয়নাঘর তৈরি হবে না।

গুমের মতো অপরাধে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত কে করবে, কীভাবে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে এবং গুমের শিকার হয়েছে এমন ব্যক্তির পরিবারের জন্য এই অধ্যাদেশে পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণের কোনো বিধান রাখা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটা তহবিল করা হয়েছে।’

রাষ্ট্রীয় সংস্থার সদস্যদের বিরুদ্ধে গুমে সংশ্লিষ্ট হওয়ার অভিযোগ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তদন্ত করবে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘তাদের ওপরেই এটা ন্যস্ত করা হয়েছে।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *