ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। তবে, কিছুটা অবনতি হওয়ার পর স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। বর্তমানে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।

ওসমান হাদির আরো একটি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, তবে সেটি করার মতো শারীরিক অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। ওসমান হাদির ভাইয়ের বরাত দিয়ে তার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

মঙ্গলবার দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চ জানায়, শরিফ ওসমান হাদির প্রাইমারি টেস্টের পর অবস্থার কিছুটা অবনতি দেখা গেলেও বর্তমানে তা স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে।

ভাইয়ের বরাত দিয়ে সংগঠনটি আরো জানায়, ওসমান হাদির আরেকটি অপারেশনের প্রয়োজন তবে সেটি করার মতো শারীরিক পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।

সিঙ্গাপুর জেনারেল হসপিটালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ডা. আব্দুল আহাদ জানান, হাদির অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে এবং তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। দেশটির নিউরোসার্জনদের সবশেষ মূল্যায়ন অনুযায়ী হাদির ব্রেনের ইস্কেমিক পরিবর্তন ও ইডেমা (ফোলা) কমেনি। চিকিৎসকদের মতে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ‘টাইম উইন্ডো’ বা সময়সীমাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হচ্ছে।

তিনি জানান, জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকায় অস্ত্রোপচার ও নিবিড় চিকিৎসা শেষে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। এসজিএইচ-এর ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্সে ভর্তির পর থেকেই নিউরোসার্জারি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিম যৌথভাবে তার চিকিৎসা শুরু করে।

 সিঙ্গাপুরে নেয়ার পর করা ব্রেনের সিটি স্ক্যানে হাদির বাম পাশের ইস্কেমিক পরিবর্তন অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ব্রেনে ফোলা বা ইডেমা এখনও বিদ্যমান। ব্রেন স্টেমে আঘাতের কারণে মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকুলার সিস্টেমেও চাপ তৈরি হয়েছে, যা চিকিৎসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

ডা. আহাদ আরও জানান, হাদির ফুসফুসের সবশেষ সিটি স্ক্যানে আগের মতোই রক্তের উপস্থিতি দেখা গেছে। এ কারণেই বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় তার বুকে চেস্ট ড্রেন দেয়া হয়েছিল। সিঙ্গাপুরেও সেই জটিলতা মাথায় রেখেই শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থাপনা চলমান রয়েছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে হাদিকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুরের সেলেতার বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দর থেকে তাকে সরাসরি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পূর্বেই প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকায় হাসপাতালে পৌঁছানোর পরপরই তাকে ভর্তি করে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করা হয়। ওসমান হাদির সঙ্গে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন তার ভাই ওমর বিন হাদি এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমিনুল হাসান ফয়সাল।

এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সোমবার দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে উড্ডয়ন করে।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমে শরিফ ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল।

এরপর রোববার (১৪ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে এক জরুরি কল কনফারেন্সে হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই কনফারেন্সে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর এবং হাদির ভাই ওমর বিন হাদি অংশ নেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওসমান হাদির চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তার চিকিৎসা কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একই সঙ্গে হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *