■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামান রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
এদিন বিকাল ৪টা ৫৩ মিনিটে রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
এদিন তাকে আদালতে হাজির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ। সেই আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক তার সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
কবিরকে রিমান্ড চেয়ে গোয়েন্দা পুলিশের করা আবেদনে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধ্যগ্রস্ত করা, নির্বাচনে আগ্রহী রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং প্রার্থীদের মনোবলকে দুর্বল করার জন্য ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনার পরপর কবির আত্মগোপনে চলে যান। তিনি এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল দাউদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মামলার রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড প্রয়োজন।
এদিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইউম হোসেন নয়ন শুনানিতে বলেন, দাঁতভাঙ্গা কবির মূল আসামির সহযোগী। তিনি ফয়সাল করিম মাসুদকে অস্ত্র সরবরাহ করেছেন। তার সঙ্গে পাশের ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ জড়িত কিনা তা দেখতে হবে। অস্ত্র কেনাবেচা সম্পর্কে এ আসামি জানে। এছাড়াও এ আসামি রাজধানীর আদাবর থানার সেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক। বিগত সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে বলতেন হাদি। সেজন্য ‘র’ ও শেখ হাসিনা জুলাই যোদ্ধাদের টার্গেট করে। এনসিপি, বিএনপি ও জামায়াতে প্রার্থীদের টার্গেট করে জনমতে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা তাদের লক্ষ্য। ফয়সালসহ কবির হাদির কাছে যান। সেখানে তার ছবি ভাইরাল হওয়ার পর সে আত্মগোপনে যান। এ হত্যাচেষ্টার সঙ্গে আর কে কে জড়িত তা জানার জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের প্রার্থনা করছি।
শুনানি শেষে আদালতের অনুমতি নিয়ে কবির বলেন, আমি পাঠাও চালাতাম। গুলির ঘটনার দিন তার (ফয়সাল) সঙ্গে গেছি এতটুকুই। এর বেশি জানি না।
এসময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কার জানতে চান আদালত। কবির বলেন, মোটরসাইকেলটি আগে আমার বন্ধু মাইনুল ইসলাম শুভ কিনেছিল আমার আইডি কার্ড দিয়ে। মালিকানা ওর, কিন্তু আমার আইডি কার্ড দিয়ে কিনেছিল।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন এলাকা থেকে কবিরকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল রাতে কবিরকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কবির রাজধানীর আদাবর থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি ওয়ার্ড শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি আদাবরের নবোদয় হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার সদর থানার বড় বিঘাই গ্রামে। ফয়সল করিমের গ্রামের বাড়িও পটুয়াখালীতে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী রাতে বলেছিলেন, কবির ৫ ডিসেম্বর ফয়সাল করিমের সঙ্গে বাংলামোটরে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি স্বীকার করেননি। কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তাঁকে দেখা গেছে। ওই ফুটেজ দেখানোর পর কবির স্বীকার করেছেন, ফয়সাল করিম ও তিনি সেদিন ওই প্রতিষ্ঠান দেখে আসতে সেখানে গিয়েছিলেন।
গত ১৪ আগস্ট ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব জাবেদ বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানার হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
এ মামলায় ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপুকে সোমবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
এ ছাড়া হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে এ ঘটনার পর ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল ঘোষণার আগেই হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পলাতক কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সরকার পতনের পর থেকে প্রকাশ্য ও গোপনে ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা হামলা, অস্ত্র ও গোলাবারুদের জোগান, অনলাইন গুজব ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এর উদ্দেশ্য হলো দেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন এবং জাতীয় নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করা।
এজাহারে বলা হয়, গত ১২ ডিসেম্বর মতিঝিলে জুমার নামাজ শেষে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে পল্টন মডেল থানাধীন বক্স কালভার্ট এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলে থাকা দুষ্কৃতকারীরা হত্যার উদ্দেশে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অপারেশনের পর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
