■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের যোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার বেলা আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো মানুষের অংশগ্রহণে এই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক।
শহীদ শরীফ ওসমান হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক বলেছেন, আজ ৮ দিন হয়ে গেল। প্রকাশ্য দিবালোকে জুমার জামাজের পর খুনি গুলি করে পার পেয়ে গেল। আমার ভাই হত্যার বিচার যেন প্রকাশ্যে এই বাংলার জমিনে আমি দেখতে পাই।
হাদির নামাজে জানাজায় অংশ নেওয়ার আগে এসব কথা বলেন আবু বকর।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার ভাই ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে। আপনারা ওর বক্তব্য শুনেছেন, তার টকশো শুনেছেন। ও সব সময়ে শহীদি মৃত্যু কামনা করতো। হয়তো আল্লাহ তায়ালা তার সেই শহীদি মন নসিব করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ৭-৮ দিন হয়ে গেল, আমরা শহীদ ওসমান হাদির বিষয়ে কিছু করতে পারলাম নাই। এই দুঃখে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আমরা ওসমান হাদির জন্য দোয়া করি। আমরা তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করি। ওর সন্তানের বয়স মাত্র ৮ মাস।
ওসমান হাদির জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ এই জানাজায় শরিক হন। গোটা বাংলাদেশ শহীদ শরিফ ওসমান হাদির শেখানো মন্ত্রে উজ্জীবিত হবে- বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির জানাজায় অংশ নিতে এসে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
জানাজায় অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, লাখো মানুষ হাদির কথা শুনতে এসেছে, আমরা হাদিকে বিদায় দিতে আসিনি, হাদির শেখানো মন্ত্র যেন বাংলাদেশের মানুষ বুকে ধারণ করে সে জন্য এসেছি।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, হাদি আমাদের বুকের ভেতর আছে। বাংলাদেশ যতদিন আছে, বাংলাদেশের মানুষের বুকের মধ্যে থাকবে হাদি।
তিনি এ সময় বারবার বলেন, বলো বীর চির উন্নত মম শির, হাদি আমাদের মাথা নত না করার মন্ত্র শিখিয়ে গেছে, এ মন্ত্র আমাদের অন্তরে থাকবে- হাদির শেখানো এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হবে বাংলাদেশ।
জানাজাকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবন এলাকা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী জানাজা বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা আড়াইটায় শুরু হয়। জানাজা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে। ১ হাজার বডি ওর্ন ক্যামেরা ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে পুরো এলাকা সুরক্ষিত রাখা হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, জানাজায় অংশগ্রহণকারীরা কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু ছাড়াই অংশগ্রহণ করেন এবং সংসদ ভবন এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল।
এর আগে, সকালে ওসমান হাদির লাশের ময়নাতদন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সম্পন্ন হয়। পরে তার লাশ আবারও নেওয়া হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। সেখানে গোসল শেষে সহযোদ্ধা ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে মিছিলসহ লাশ নিয়ে নিয়ে আসা হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়।
এদিন সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় আসতে শুরু করেন মানুষ। বেলা একটার দিকে দেখা যায়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ফার্মগেট, বিজয়স্মরণী, আসাদগেটসহ আসপাশের এলাকায় মানুষে ভরে গেছে।
ওসমান হাদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে দাফন করা হবে। এরই মধ্যে কবর প্রস্তুত করা হয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ-সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধির পাশে হাদির কবর খননের কাজ শুরু হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে তাঁকে কবির সমাধির পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার প্রস্তুতি চলছে।
উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হওয়ার পর ১৫ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।
