■ ক্রীড়া প্রতিবেদক ■
অবশেষে বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতি পেলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ইংলিশ প্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরী। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছেন হামজা।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে আরও জানায়, ফিফার ফুটবল ট্রাইব্যুনালের প্লেয়ার স্ট্যাটাস চেম্বার হামজা চৌধুরকে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহনের অনুমতি প্রদান করছে। এর ফলে হামজা চৌধুরী, যিনি ইতিমধ্যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল লেস্টার সিটি এফসি এবং ইংল্যান্ড যুব দলের হয়ে খেলার অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন, এখন থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামতে পারবেন।
এছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় হামজা চৌধুরীর একটি ভিডিও পোস্ট করে বাফুফে। সেখানে বাফুফে লিখেছে, ‘বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছে যে হামজা দেওয়ান চৌধুরীর বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে খেলার অনুমতি পেয়েছেন। ফিফার ফুটবল ট্রাইব্যুনালের প্লেয়ার স্ট্যাটাস চেম্বার এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।’
বাফুফের ছোট্ট ভিডিও বার্তায় হামজা বলেন, ‘হাই, আমি হামজা। আমি সবকিছুর জন্য খুবই খুশি। বাংলাদেশের হয়ে খেলার তর সইছে না। আশা করছি, দ্রুতই দেখা হবে।’ ২৭ বছর বয়সী হামজার ছবি পোস্ট করে লেস্টার সিটি লিখেছে, হামজা চৌধুরী এখন থেকে বাংলাদেশের।
হামজা নিজেও ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘সব কিছু ঠিকমতো চলছে। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আশা করছি, শিগগিরই দেখা হবে।’ এছাড়া এদিন সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে নিজের ইন্সটাগ্রামে তিনি লিখেছেন, ‘অবশ্যই ইংল্যান্ড আমার বাড়ি, কিন্তু বাংলাদেশও তাই। আমার জন্মভূমিতে ফিরে যেতে এবং আমি যাদের সঙ্গে বড় হয়েছি তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারা, এটি আমার কাছে সবকিছুর উর্ধে। এতে আমি অনেক আনন্দ ও গর্ববোধ করছি।’
আগেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন হামজা। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এফএ তাকে বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার ব্যাপারে অনাপত্তিপত্র দেয়। পরের পদক্ষেপ হিসেবে ফিফার প্লেয়ার স্ট্যাটাস কমিটির কাছে আবেদন করে বাফুফে। এই কমিটির কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পেয়েছে বাফুফে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিস্টার সিটির হয়ে খেলেন হামজা। বাংলাদেশি পরিবার ও নিজের ইচ্ছায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চান তিনি। এর আগে হামজা ইংল্যান্ড যুব দলের হয়ে খেলেছেন।
প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ পর্যায়ে খেলা প্রথম ফুটবলার হিসেবে হামজা এখন বাংলাদেশের জার্সি পরার অপেক্ষায় আছেন।
যে কারণে তার ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও গ্রানাডা জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ ছিল। ইংল্যান্ড জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নও দেখেছেন তিনি। দীর্ঘদিন বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার প্রস্তাব থাকলেও ইংল্যান্ডের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। তবে হামজা বাংলাদেশে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কিছু জটিলতা দেখা যায়। যেহেতু তিনি ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন তাই ফিফার ফুটবল ট্রাইব্যুনাল থেকে ছাড়পত্র পেতে হয়েছে।
সব জটিলতা মিটে যাওয়ায় হামজাকে আগামী বছর মার্চে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় পর্বে বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা যেতে পারে। ২৫ মার্চ ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের মিশন।
১৯৯৭-এর ১ অক্টোবর লেস্টারশায়ারের লাফবরোতে জন্ম নেয়া হামজা চৌধুরী ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে ৭টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে এখন পর্যন্ত লেস্টার সিটির হয়ে ২৫৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে খেলার ঘটনা নতুন নয়। জামাল ভূঁইয়াকে দিয়ে শুরুটা হয় ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৯ সালে বাংলাদেশের হয়ে খেলার ছাড়পত্র পান ফিনল্যান্ডপ্রবাসী তারিক কাজী।
জামাল দেশের হয়ে এখন পর্যন্ত ৮৪টি ম্যাচ খেলেছেন। অধিনায়কত্বও করেছেন। তারিক কাজীও দলের অপরিহার্য সদস্য। তবে হামজাকে নিয়ে বাড়তি আগ্রহ বা আলোচনার কারণ ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে খেলেছেন, এমন কেউ আগে বাংলাদেশের হয়ে খেলেনি।
২৬ বছর বয়সী হামজা বর্তমানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন লেস্টার সিটিতে খেলছেন, ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেছেন এবং জিতেছেন এফএ কাপও। এ ছাড়া খেলেছেন ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগ ও এর পরের ধাপ উয়েফা কনফারেন্স লিগেও। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের মধ্যে এর আগে শুধু তারিক কাজীই ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলেছেন।
হামজার জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও তাঁর মা বাংলাদেশি। মায়ের বাড়ি ছিল সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলায়। মায়ের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন, সিলেটেও ঘুরে গেছেন।