■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হলেও এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমা চাইতে রাজি নন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে যে সরকার গঠিত হবে, এমন যে কোনো সরকারের অধীনে তিনি দেশে ফিরবেন না, আপাতত ভারতেই অবস্থান করবেন।
ব্যাপক প্রাণহানির জন্য তিনি ‘মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙে পড়া’কে দায়ী করে বলেন, ‘একজন নেতা হিসেবে আমি চূড়ান্তভাবে নেতৃত্বের দায় নিচ্ছি, কিন্তু আমি নিরাপত্তা বাহিনীকে ভিড়ের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম বা চেয়েছিলাম, এই দাবিটি পুরোপুরি ভুল।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতেই অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটিই তার প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকার। ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার আজ বুধবার রয়টার্স, যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশ হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা শুধু রাজনৈতিক অন্যায় নয়, বরং তা দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দেবে। তার ভাষায়, “কোটি কোটি মানুষ আওয়ামী লীগের সমর্থক। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হলে তা কোনোভাবেই বৈধ নির্বাচন হতে পারে না।” তিনি আরও দাবি করেন, তার দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না—এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা ভোট বর্জনের পথই বেছে নেবে।
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে এবং তারা আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এর আগেই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে এবং দলটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা জানান, তিনি কোনো গোপন সমঝোতা বা আলোচনায় জড়িত নন। তবে আশা প্রকাশ করেন যে, ‘সাধারণ বিবেকের জাগরণ ঘটবে’ এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে। তবে এখনি তার দেশে ফেরার পরিকল্পনায় নেই বলে জানান।
দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি জানান, সরকারে হোক বা বিরোধীদলে হোক- দল ভূমিকা নেবে, এবং দলের নেতৃত্ব তার পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হবে না। তিনি বলেন, এটা আমার বা আমার পরিবারের ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের জন্য যে ভবিষ্যৎ আমরা সবাই চাই, সেজন্য সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসতেই হবে। কোনো এক ব্যক্তি বা পরিবার আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে না।
দেশে ফিরতে চান কি না সে প্রশ্নের জবাবে হাসিনা জানান, তিনি অবশ্যই দেশে ফিরতে চান। তবে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে হওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে যেই সরকারই আসুক তাদের সময়ে তিনি দেশে ফিরবেন না এবং তিনি ভারতেই অবস্থান করবেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে যেখানে বলা হয়েছে, মাত্র তিন সপ্তাহে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে—সেই তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শেখ হাসিনা। তার দাবি, ‘এই সংখ্যা অতিরঞ্জিত। আমরা বরং প্রাণহানি কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছি।’
রয়টার্স বলছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর পরবর্তী নির্বাচনে বিএনপিকে প্রধান দল হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটির বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা ভোটারদের বড় অংশকে বাদ দিয়ে নির্বাচন আয়োজনকে গণতন্ত্রবিরোধী ও আত্মঘাতী পদক্ষেপ মনে করেন।
নিজের উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি চাই, মানুষ আমাকে স্মরণ করুক সেই নেতা হিসেবে, যিনি সামরিক শাসনের পর দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, এবং যিনি লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন সেই অর্জনগুলো ঝুঁকির মুখে।’
উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানে সহিংস দমন-পীড়ন ও আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুমসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা চলমান।
এর আগে ট্রাইব্যুনাল গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ প্রকাশ বা প্রচার নিষিদ্ধ করে।
