■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২৮ অক্টোবর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম বাদী হয়ে হাইকোর্টে এ রিট করেন।
বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি সিকদার মো. মাহমুদুর রাজীর দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের শুনানি হতে পারে।
রিট দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তিনি বলেন, দলটি রাজনৈতিক কার্যক্রম যাতে পরিচালনা করতে না পারেন সেজন্য এ রিট করা হয়েছে।
গত আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয় একটি রিট করা হয়েছিল। বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে তা গত ১ সেপ্টম্বর খারিজ করে দেয়।
এবার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম রিট দায়ের করেছেন।
এর আগে, ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত ১৯ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে হাসনাত বলেছিলন, তারা যেভাবে মানবতা লঙ্ঘন করেছে তাদের ন্যূনতম মানবতা করার কোনো সুযোগ নেই। আপনারা জানেন জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, ইতালিতেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইভাবে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ যুবলীগের যারা রয়েছে তাদের বাংলার মাটি থেকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এর আগে ২৩ অক্টোবর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই দিন রাতে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। তার আগের দিন ২২ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিল শেখ হাসিনার পতনের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর পরদিনই নির্বাহী আদেশে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রজ্ঞাপনে ছাত্রলীগকে গত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল ছাত্রলীগ। এসবের প্রমাণ দেশের সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীর অপরাধ আদালতেও প্রমাণ হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রী ও জনগণের ওপর আক্রমণ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী; অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক, উস্কানিমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। সরকারের কাছে এসব কর্মকাণ্ডের যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সত্তার কার্যালয় বন্ধ করবে সরকার। ব্যাংক হিসাব বা অন্য সম্পদ জব্দ হবে। নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যরা দেশ ত্যাগ করতে পারবে না। সংগঠনের পক্ষে বা সমর্থনে বিবৃতি, বিজ্ঞপ্তি, প্রকাশনা, প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসমক্ষে বক্তৃতা নিষিদ্ধ হবে।
১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। তাদের আবেদনে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৮ আগস্ট নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।