■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন সাড়ে সাত ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শনিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার খায়রুল ইসলাম রনি এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
আগুনের পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় শাহজালাল বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল পুনরায় চালু করা হয়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ কাউসার মাহমুদ বলেন, ৯টা ৬মিনিটে ফ্লাই দুবাইয়ের একটি উড়োজাহাজ শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম জানান, স্থগিত থাকা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো আজ রাত ৯টা থেকে একে একে চালু হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানায়, বেলা ২টা ১৫ মিনিটে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ঘটনায় কেউ নিহত হননি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাত ৯টা থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নিজে বিমানবন্দরে অবস্থান করে সমগ্র পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের উৎস শনাক্ত করে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় যাত্রী ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা ও ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
আগুনের ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ, ক্ষয়ক্ষতি ও দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রশাসন ও মানব সম্পদ পরিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) মো. নওসাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চিফ (ফ্লাইট সেফটি)। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি থাকবেন সদস্য হিসেবে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, মহাব্যবস্থাপক (কর্পোরেট সেফটি অ্যান্ড কোয়ালিটি), চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স), উপ-মহাব্যবস্থাপক (সিকিউরিটি), উপ-মহাব্যবস্থাপক (কার্গো-রপ্তানি) এবং উপ-ব্যবস্থাপক (ইন্স্যুরেন্স)।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ চিহ্নিত করা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ, দায়-দায়িত্ব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরি করবে।
কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইওর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনাটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নাশকতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে
শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজসহ অন্যান্য অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সংঘটিত একাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা গভীরভাবে অবগত। আমরা সব নাগরিককে আশ্বস্ত করতে চাই—নিরাপত্তা সংস্থাগুলো প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করছে এবং মানুষের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।
আরো বলা হয়, নাশকতা বা অগ্নিসংযোগের কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বা উসকানির মাধ্যমে জনজীবন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—যদি এসব অগ্নিকাণ্ড নাশকতা হিসেবে প্রমাণিত হয়, এবং এর উদ্দেশ্য হয় জনমনে আতঙ্ক বা বিভাজন সৃষ্টি করা, তবে তারা সফল হবে কেবল তখনই, যখন আমরা ভয়কে আমাদের বিবেচনা ও দৃঢ়তার ওপর প্রাধান্য দিতে দেব’, বলা হয় বিবৃতিতে।
বাংলাদেশ অতীতেও বহু কঠিন সময় অতিক্রম করেছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ঐক্য, সংযম ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আমাদের গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে যেকোনো হুমকির মোকাবিলা করব। আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।