■ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ■
ইসকনকে ‘জঙ্গি সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোনো ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানান হেফাজত নেতারা। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগরীর হাজারী গলিতে মুসলিম দোকানদারের ওপর হামলা-ভাঙচুর এবং যৌথ বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা ও অ্যাসিড নিক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে নগরীর আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ চত্বরে সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর শাখা এ সমাবেশের আয়োজন করে।
চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত নেতা মাওলানা কামরুল ইসলাম কাশেমী বলেন, ‘ইসকন নিয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, ইসকন কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন একটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন। ইসকনকে বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব ইসকন সনাতনের কোনো ধর্মীয় সংগঠন নয়। ইসকন ইহুদি ও খ্রিস্টানদের লালিত-পালিত একটি জঙ্গি সংগঠন। তাই আমাদের হিন্দু ভাইদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি, আপনারা ইসকনের ফাঁদে পা দিবেন না।’
ইসকন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শত্রু উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছি, আমাদের সনাতন ভাইয়েরা ইসকনের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়েছেন।’
মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে হেফাজত ইসলামের ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক কামরুল ইসলাম কাশেমী বলেন, ইসকন ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের লালিত-পালিত জঙ্গি সংগঠন। তিনি আরো বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইদের বলছি, আপনারা ইসকনের ফাঁদে পা দেবেন না। বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি, ইসকনের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন। হাটহাজারীতে ইসকনরা সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইদের উচ্ছেদ করেছে। শুধু হাটহাজারী নয়, আরও অনেক জায়গায় হিন্দু ভাইদের জায়গা দখল করেছে এ ইসকনরা। এ ইসকনরা শুধু বাংলাদেশের শত্রু না, সারা বিশ্বের শত্রু।
কামরুল ইসলাম কাশেমী বলেন, হেফাজত ইসলামের দায়িত্ব হচ্ছে মুসলিম সমাজের কাছে তার করণীয় কী, তা অবগত করা। যখন কোনো মুমিন আক্রান্ত হয়, তার পাশে যদি অন্য মুমিনরা না দাঁড়ায়, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব আসে। আমরা সকলেই একটা শান্তিপূর্ণ সমাজ কামনা করি। এ দায় থেকে হেফাজত ইসলাম আজ বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করেছে। দেশের শাসনে যে ফ্যাসিবাদ ও নৈরাজ্য ব্যবস্থা তৈরি করেছিল, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তা নসাৎ করে দিয়েছে। আমাদের প্রধানতম দায়িত্ব হচ্ছে, আমরা যে ১৬ বছর নৈরাজ্যকর অবস্থাতে ছিলাম, এখন যে মুক্ত বাতাসে কথা বলতে পারছি, এই মুক্ত বাতাসে কথা বলার অধিকার যেন আবার হারিয়ে না ফেলি সেটা নিশ্চিত করা।
হেফাজতের এ নেতা বলেন, আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম, সেটাকে ধরে রাখতে হবে। কোনো কারণে, কোনো উসকানিতে তা যেন বিনষ্ট না হয়। এখানে ষড়যন্ত্র হচ্ছে ভেতর থেকে, বাইর থেকে। আমাদের একতাকে যেন নষ্ট করা যায়। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি আন্দরকিল্লা মোড় থেকে নগরীর চেরাগী মোড় হয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার রব্বানী দাবি করেন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে ইসকন সদস্যরা।
“সাধারণ পথচারী ও সেনাবাহিনী রেহাই পাচ্ছে না তাদের কাছ থেকে। ছাত্রলীগ যেমন নিষিদ্ধ হয়েছে, এখন ইসকনের আড়ালে ও হিন্দুত্ববাদীদের আড়ালে ইসকন নামক সংগঠন ‘জঙ্গি তৎপরতা’ চালিয়ে যাচ্ছে। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের মত ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যদি ইসকনকে নিষিদ্ধ করা না হয় তাহলে হেফাজতে ইসলাম তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবে।
এদিকে হাজারী গলির ঘটনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বাংলাদেশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সংগঠনটির নেতারা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে ইসকন বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।
এর আগে বুধবার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একই দাবি করেছিলেন সংগঠনের নেতারা।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল আন্দরকিল্লা থেকে এসে নগরের জামাল খান চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এসে শেষ হয়। ওই সময় পুলিশ সদস্যরা কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়।
চট্টগ্রাম মহানগর হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক মাওলানা তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন হেফাজত নেতা মাওলানা নুরনবী, আনোয়ার হোসাইনি, সালাউদ্দিন, আশরাফ বিন ইয়াকুব, মো. শহীদ, মো. রব্বানী প্রমুখ।
গত মঙ্গলবার ওসমান আলী নামের হাজারী লেনের এক ব্যবসায়ীর দেওয়া ইসকনবিরোধী ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই পোস্টের প্রতিবাদে ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যক্তি হাজারী লেনে জড়ো হয়ে ওসমান ও তাঁর ভাইয়ের দোকানে আগুন দিতে উদ্যত হন। এই উত্তেজনার মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ছয়টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছায়। যৌথ বাহিনী তাঁদের দুই ভাইকে উদ্ধার করে। আইনি প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশ্বস্ত করা হলেও কিছু ব্যক্তি আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন।
একপর্যায়ে তাঁরা জুয়েলারি কাজে ব্যবহৃত অ্যাসিড নিক্ষেপ করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যদের ওপর। এতে সেনাবাহিনীর ৫ সদস্যসহ পুলিশের ১২ সদস্য আহত হন। এ সময় এক দল ব্যক্তি ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ফেলে। পরে যৌথ বাহিনীর ১০টি টহল দল রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাজারী লেন এলাকায় যায়। এ সময়ও একদল ব্যক্তি আবার তাদের ওপর অ্যাসিডসদৃশ বস্তু ছুড়তে শুরু করেন। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এ সময় ৮২ জনকে আটক করে নিয়ে আসে যৌথ বাহিনী। তাঁদের মধ্যে ৪৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে মোট গ্রেফতার ৫৩ জন। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানার এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে ৪৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। একই দিন ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় পোস্ট শেয়ারকারী ওসমান আলীকে।