■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা ইব্রাহিম আকিল নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) লেবাননের বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে এই ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও ৬৬ জন। লেবাননের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জানিয়েছে।
বৈরুতে হামলার কথা নিজেরাই জানিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ। এই এলাকা হিজবুল্লাহর শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত।
হামলার আগে আল-জামাউস এলাকায় অবস্থিত একটি ১০ তলা ভবনে ইব্রাহিম আকিল ও রাদওয়ান ইউনিটের অন্যরা বৈঠক করছিলেন। ঠিক সে সময়ই হামলা হয়। হামলার পর অনেকেই নিখোঁজ রয়েছে।
আরব নিউজ আরও কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ডে বৈঠক করছিলেন আকিল ও তাঁর সহযোগীরা। ইসরায়েলি হামলায় ভবনটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে উদ্ধারকারীরা বৈঠকস্থলে যেতে পারছেন না। ফলে উদ্ধার করাও সম্ভব হচ্ছে না।
আকিল হিজবুল্লাহ ও অজ্ঞাত ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে একটি যৌথ বৈঠক করছিলেন।
এদিকে ইসরায়েলি গণমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার পেজার বিস্ফোরণে আহত হলেও প্রাণে বেঁচেছিলেন আকিলও। শুক্রবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি। আর ওইদিন ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হন।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তথ্যমতে, লেবাননের বাইরে অভিযান পরিচালনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিলেন আকিল। হিজবুল্লাহর অন্য জ্যেষ্ঠ সামরিক নেতাদের মতো আকিল প্রকাশ্যে আসতেন না। জনসমক্ষে উপস্থিতি, কিংবা কোনো বিবৃতিও দিতেন না।
স্থানীয় এমটিভি চ্যানেল জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর এলিট রাদওয়ান ফোর্সের নিহত অন্য সাত সদস্যের সঙ্গে তার মরদেহও পাওয়া গেছে।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আর কোনো মরদেহ আছে কি না সন্ধান করছে।
দুই মাসেরও কম সময় আগে গত জুলাইয়ে হিজবুল্লাহর আরেক শীর্ষ কমান্ডারকে হত্যা করেছিল ইসরায়েল। ফুয়াদ শোকর নামেও ওই কমান্ডার হিজবুল্লাহর সামরিক শাখার শীর্ষ দায়িত্বে ছিলেন। ইরানের সহায়তাপুষ্ট লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সামরিক শাখায় শুকরের পর আকিলকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ধরা হতো।
গাজা যুদ্ধের মধ্যেই লেবাননে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে ইসরাইল। জুনে গোষ্ঠীটির শীর্ষ কমান্ডার তালেব আবদুল্লাহকে হত্যা করে এ অভিযান শুরু। এরপর জুলাইয়ে ফুয়াদ শোকর এবং মুহাম্মদ নিমাহ নাসেরকে হত্যা করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।
এবার পেজার এবং ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে মধ্যপ্রাচ্য যখন উত্তাল, ঠিক সে সময় আরও এক হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে খুন করল ইসরায়েল।
এদিকে নিহত আকিল হিজবুল্লাহর অভিজাত ‘রাদওয়ান ফোর্স’র জ্যেষ্ঠ নেতা ছিলেন। হামলার সময় তিনি হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাতেহ বৈঠক করছিলেন।
ইব্রাহিম আকিল ১৯৬০ সালে লেবাননের বেকা উপত্যকায় জন্মগ্রহণ করেন। হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার আগে আকিল লেবাননের বড় শিয়া রাজনৈতিক দল আমালে যোগদান করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিজবুল্লাহ’র এই শীর্ষ নেতাকে ১৯৮৩ সালে বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে ট্রাক বোমা হামলার জন্য দায়ী করা হয়। ওই ঘটনায় ৬৩ জন নিহত হয়। এছাড়া দূতাবাসে হামলার ঘটনার ৬ মাস পর একটি মার্কিন মেরিন ব্যারাকেও হামলার ঘটনা ঘটে। যাতে ২৪১ জন নিহত হয়। এ ঘটনার জন্যও তাকে দায়ী করা হয়।
এ ঘটনায় তাকে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আকিলকে হত্যার মিশন ছিল যুক্তরাষ্ট্রেরও। মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, আকিল ‘তাহসিন’ নামেও পরিচিত।
এসব হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে আকিলকে খুঁজছিল যুক্তরাষ্ট্র। তার পরিচয়, অবস্থান, কিংবা ধরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আল জাজিরা বলছে আকিলের মাথার বিনিময়ে ৭০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
গত মঙ্গল ও বুধবার পরপর দুইদিন হিজবুল্লাহর সদস্যেদের ব্যবহার করা কয়েক হাজার তারহীন যোগাযোগযন্ত্র পেজার ও ওয়াকিটকিতে একযোগে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৩৭ জন নিহত ও ৩ হাজার মানুষ আহত হন। যোগাযোগ যন্ত্রগুলো বিস্ফোরণের পরপরই ইসরায়েলি হামলায় আকিলসহ অন্য কমান্ডারদের নিহতের ঘটনায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে হিজবুল্লাহ।