■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। শনিবার (১৯ অক্টোবর) আলজাজিরার প্রতিবেদনে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর মুখপাত্র জানিয়েছেন, লেবানন থেকে ছোড়া একটি ড্রোন তেল আবিবের উত্তরে সিজারিয়ায় নেতানিয়াহুর বাসভবনে আঘাত হেনেছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, সিজারিয়ায় হামলার সময় নেতানিয়াহু ও তার পরিবার সেখানে ছিলেন না। এ হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, উপকূলীয় শহর সিজারিয়ায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এ শহরেই নেতানিয়াহুর ছুটির দিন কাটানোর জন্য একটি বাড়ি রয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবানন থেকে ইসরায়েলে একটি ড্রোন ছোড়া হয়েছে। ড্রোনটি একটি ভবনে আঘাত হেনেছে। তবে ভবনটি কিসের তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশকারী আরও দুটি ড্রোন প্রতিহত করা হয়ছে। ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
তবে ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, আজকের রকেট হামলায় অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলের হাইফার উত্তরে দেশটির সামরিক বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে রকেট নিক্ষেপ করার দাবি করেছে হিজবুল্লাহ। দক্ষিণ লেবাননে তাদের ঘাঁটিতে ইসরায়েলি হামলার জবাবে এ হামলা চালিয়েছে গোষ্ঠীটি।
কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে নেতানিয়াহুর বাড়িতে হামলার দায় স্বীকার করেনি হিজবুল্লাহ। এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্যও করেনি গোষ্ঠীটি।
হিজবুল্লাহ ছাড়া অন্য কেনো সশস্ত্র গোষ্ঠীও এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
সৌদি আরবের সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল আল-হাদাসকে উদ্ধৃত করে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তিন ড্রোনের একটি সিজারিয়ায় নেতানিয়াহুর বাসভবন লক্ষ্য করে ছোড়া হয়েছিল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ঘটনার সময় নেতানিয়াহু বা তাঁর স্ত্রী ঘটনাস্থলের কাছে ছিলেন না। এ ছাড়া এই হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, তারা সিনওয়ারকে হত্যার জন্য গাজায় ‘ঘর থেকে ঘরে’ তাঁকে ট্র্যাক করেছে এবং অবশেষে এক ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধ শেষে তাঁকে হত্যা করেছে। সিনওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন ইসরায়েলি বাহিনীকে ফাঁকি দিতে। তবে হার মানতে হয় তাঁকে।
আইডিএফের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজার এই অঞ্চলে (যেখানে সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়) ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর ৮২৮তম ব্রিগেডের (বিসলাচ) সেনারা তিনজন সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করে হত্যা করে। দেহ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়েছে।’
পরে পৃথক এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, রাফাহ জেলায় ইয়াহইয়া সিনওয়ার এবং আরও দুই যোদ্ধাকে শনাক্ত করার পর হত্যা করা হয়েছে। হ্যাগারি বলেন, ‘এই তিনজন আশ্রয়ের জন্য এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে যাচ্ছিলেন। আমাদের সেনারা তাঁদের অনুসরণ করে এবং এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।’
হ্যাগারি আরও বলেন, ‘সিনওয়ার একা পালিয়ে যান একটি বিল্ডিংয়ে। সেখানে আমাদের বাহিনী একটি ড্রোন দিয়ে পুরো এলাকা স্ক্যান করেছিল—যা আপনি এই ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের ছোড়া গুলিতে ইয়াহইয়া সিনওয়ারের একটি হাত আহত করেছিলেন। তিনি ড্রোনটির দিকে একটি ডাল ছুড়ে মেরেছিলেন।’
আলজাজিরার প্রতিনিধি নূর ওদেহ বলেছেন, নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলার বিষয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ড্রোন হামলার তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর বাসভবন এমন একটি এলাকায় অবস্থিত, যেখানে ব্যাপক শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রায় দুর্ভেদ্য এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কীভাবে ফাঁকি দিয়ে হিজবুল্লাহর ড্রোন নেতানিয়াহুর বাসভবনে আঘাত হানল, তা ইসরায়েলি বাহিনী ব্যাপক উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। নূর ওদেহ বলেন, লেবানন সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের প্রায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে গেছে ড্রোনটি। পুরো সময়ে ড্রোনটি শনাক্ত করতে পারেনি ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এমনকি ড্রোন হামলার সময় বাসিন্দাদের যে সাইরেন বাজিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়, এক্ষেত্রে সেটিও করা হয়নি। একেবারে যেখানে আঘাত করার উদ্দেশে হিজবুল্লাহ ড্রোনটি ছুড়েছিল, সেখানেই আঘাত হেনেছে। এই ঘটনা ইসরায়েলে এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।
নূর ওদেহ বলেন, নেতানিয়াহুর বাসভবনে ড্রোন হামলা চালানোর জন্য লেবানন থেকে রকেটের বিশাল বহর ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্যালিলি ও হাইফা শহরসহ উত্তর ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বাজানো হয়েছে।
উত্তর ইসরায়েলের বৃহত্তম শহর হাইফা। কৌশলগত বন্দরনগরী হিসাবেও দেখা হয় এই শহরটিকে। যেখানে প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস এবং দেশটির নৌবাহিনীর সদর দপ্তর রয়েছে। ওদেহ বলেন, আমরা সিজারিয়ায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে একটি ড্রোন আঘাত হানতে সফল হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পরপরই সাইরেন বাজানো বন্ধ হয়ে যায়।
ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সাথে সরাসরি সংঘাত শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে নেতানিয়াহুর বাসভবনে এই হামলাকে। ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিজবুল্লাহ নতুন ধাপে প্রবেশ করার তথ্য জানানোর একদিন পর এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
একদিন আগে হিজবুল্লাহর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সাথে সংঘাতে নতুন ধাঁচের অস্ত্র মোতায়েন করেছে হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীটির অপারেশন রুম থেকে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা প্রথমবারের মতো নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন ব্যবহার করেছেন।
‘‘যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবাননের কয়েকটি অংশে আক্রমণকারী ইসরায়েলি সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছেন।’’