ফরমালিনমুক্ত আম চেনার উপায়

■ ফিচার ডেস্ক ■

আমের ভরা মৌসুম চলছে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে হিমসাগর, ফজলি, ল্যাংড়া বা আম্রপালি আমের স্বাদের অপেক্ষায় থাকে বাংলাদেশিরা। কিন্তু এখন আমের মধ্যে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকারক ফরমালিন। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে কিডনি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে বিকলাঙ্গতা, এমনকি ক্যানসারেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।

ভালো ও মিষ্টি আমের বৈশিষ্ট্যগুলো কী রকম

১. আম কেনার পর কিছুক্ষণ রেখে দিন। গাছ পাকা আম হলে গন্ধে মৌ মৌ করবে চারপাশ। ওষুধ দেওয়া আমে এই মিষ্টি গন্ধ হবে না। আর পরিপক্ক আম চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পাকা আম সাধারণ হলুদাভ হয় এবং পানিতে রাখলে ডুবে যায়।

২. লক্ষ্য করুন যে স্থান থেকে আম কিনছেন সেখানে রাখা আমের গায়ে মাছি বসছে কিনা। কেননা ফরমালিন যুক্ত আমে মাছি বসবে না।

৩. গাছ পাকা আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর। কারবাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম, দাগহীন ও আগাগোড়া হলদেটে। কারণ, আমগুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফেলে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। অন্যদিকে, গাছ পাকা আমের দাগ পড়বেই।

৪. আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে তারপর কিনুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছাকাছি ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেওয়া আমে মিষ্টি গন্ধ তো থাকবেই না, উল্টো বিচ্ছিরি গন্ধ বের হবে। আম খাওয়ার সময় যদি টক, মিষ্টি কোন স্বাদ না পেয়ে পানসে স্বাদ পান, তাহলে বুঝবেন আমে ওষুধ দেওয়া।

৫. এবড়ো-থেবড়ো নয় এমন আম কিনুন। যে আমের খোসা কুঁচকে গেছে সেটি কিনবেন না। হিমসাগর ছাড়াও নানান জাতের আম আছে, পাকলেও সবুজ থাকে ও অত্যন্ত মিষ্টি হয়। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।

৬. যে আম কিনবেন সেখান থেকে একটি আম নিয়ে আঙুলের মাথা দিয়ে হালকা টিপে দেখুন। আম যদি পাকা হয় তবে সেটি নরম হবে। যদি আঙুলের চাপে গর্ত হয়ে যায় তাহলে কিনবেন না। কারণ, আম আগেই বেশি পেকে গেছে। যা খেতে একদমই স্বাদ লাগে না।

৭. প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম কাটলে এর ভেতরের শাসটি হবে লালচে হলুদ রংয়ের কিন্তু ফরমালিন যুক্ত আমের ভেতরের অংশটি হবে হালকা অথবা গাঢ় হলুদ রঙের। এর মানে হলো বাইরে থেকে আমটি পাকা দেখালেও ভেতরটি পাকা নয়।

৮. প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম বেশ মিষ্টি হয় এবং এতে অনেক বেশি রস থাকে। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আমে রস অনেক কম থাকে। ভেতরটা পাকা থাকে ঠিকই কিন্তু রস কম বের হয়।

ফরমালিনমুক্ত আম চেনার উপায়

এক নজরে দেখে নিন রাসায়নিকমুক্তমুক্ত আম চেনার উপায় এবং কিভাবে চিনবেন গাছপাকা আম!

– গাছপাকা আমের উপর অবশ্যই মাছি বসবে

আম কিনতে গেলে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল করবেন তা হল- আমের ওপর মাছি বসে কিনা। আমে রাসায়নিক বা কার্বাইড দেওয়া থাকলে সে আমের উপরে কখনই মাছি বসবে না।

– গাছপাকা আমের গায়ে সাদাটে ভাব থাকবে

গাছপাকা আম হলে দেখবেন, আমের গায়ে এক ধরণের সাদাটে ভাব থাকে, সেরকম রঙিন ভাব থাকেনা। কিন্তু কার্বাইড বা অন্য রাসায়নিকে দেওয়া আম হয় সুন্দর, দাগহীন ও পরিষ্কার।

– গাছপাকা আমের গায়ে অনেক দাগ থাকে

গাছপাকা আমের ত্বকে দাগ থাকে। রাসায়নিকে পাকানো আমের গা হয় দাগহীন। কারণ কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়।

– কেমিক্যাল যুক্ত আমের কোন সুস্বাদ বা টক-মিষ্টি গন্ধ নেই

আম কেনার পর সেই আম মুখে দেয়ার পর যদি দেখেন যে আমে কোন সৌরভ নেই কিংবা আমে টক-মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই- বুঝবেন যে সে আমে কার্বাইড জাতীয় কোন রাসায়নিক দ্রব্য দেওয়া হয়েছে।

– বদ্ধ জায়গায় আম কিছুক্ষণ রাখুন

আম কেনা হলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছপাকা আম হলে কিছুক্ষণ পর গন্ধে মৌ মৌ করবে চারপাশ। ওষুধ দেয়া আমে এই সুমিষ্ট গন্ধ পাওয়াই যাবে না।

– খোসার রঙের ভিন্নতা

গাছপাকা আমের গায়ের রঙও আলাদা। গোড়ার দিকে একটু গাঢ় রঙ থাকে গাছপাকা আমে। রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পাকানো আমের আগাগোড়া হলদে রঙ হয়ে যায়। হিমসাগর সহ আরও বেশ কিছু জাতের আম পাকলেও সবুজ থাকে। গাছপাকা হলে এসব আমের ত্বকে কালো কালো দাগ পড়ে। রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হলে আমের ত্বক হয় মসৃণ ও সুন্দর।

– আমের সুমিষ্ট গন্ধ পাওয়া যাবে

ক্যামিকেলমুক্ত আম চেনার উপায় একটি উপায় হচ্ছে গন্ধ শুকে দেখা। আম কেনার আগে নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুকুন। গাছপাকা আম হলে অবশ্যই বোঁটার কাছে চেনা গন্ধ পাবেন। ওষুধ দেওয়া আমে গন্ধ খুব বেশি থাকে না কিংবা বাজে বা ঝাঁজালো গন্ধ থাকে। ফলে বোঝা যায় যে আমটা আসলে গাছপাকা না।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *