হাসিনাকে গ্রেফতারে রেড নোটিশ জারি করতে আইজিপিকে চিঠি

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি দিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সংস্থা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে গত ১০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কার কাজ পরিদর্শন শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করার জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলার আসামি শেখ হাসিনাসহ সব পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে সরকার। পলাতক আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

তিনি বলেন, খুব দ্রুতই ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হবে। পলাতক ফ্যাসিস্ট চক্র পৃথিবীর যে দেশেই থাকুক তাদের ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, এটা কোনো মামলা না, এটা আইসিসির প্রসিকিউশন অফিসকে একটা পিটিশন লেখে জানানো। এটা পৃথিবীর যে কোনো মানুষ করতে পারে। এটা এতই একটা অবিশ্বাস্য ও বস্তুনিষ্টহীনতামূলক মামলা কোনোভাবেই এটার রিট হওয়ার কোনো কারণ নাই। এটা ফ্যাসিস্টচক্র বিশ্ব জনমতকে, বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য মিথ্যা প্রচারণার চালানোর উপায় হিসেবে এ মামলাটা করেছে। 

গত ১৭ অক্টোবর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের পৃথক মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অন্য যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়, তারা হলেন– শেখ হাসিনা বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, দীপু মনি, আ ক ম মোজাম্মেল হক, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক মন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, শেখ সেলিম, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদ, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক র‌্যাব ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান, শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ড. জাফর ইকবাল, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামসহ ৪৬ জন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অপর দুই জন হলেন– বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এর আগে পৃথক মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো দলের বিচারের বিষয়ে তদন্ত শুরু করিনি। যদিও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা যে তদন্তগুলো করছি, প্রত্যেকটি জায়গায় কিন্তু আওয়ামী লীগের যুক্ত থাকার বিষয়টি পাচ্ছি। যেমন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়-প্রেসিডিয়াম, যুবলীগ-ছাত্রলীগের যে কেন্দ্রীয় কমিটি আছে তাদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে গণহত্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ আমরা ক্রমাগত পাচ্ছি।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আরও বলেন, দল হিসেবে আলাদাভাবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত না শুরু করলেও ব্যক্তি পর্যায়ের তদন্তের ক্ষেত্রেই আমরা তাদের দলের বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাচ্ছি। আমরা আগে আসলে ব্যক্তি পর্যায়ের বিচারগুলো করতে চাই। যখনই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে দল হিসেবে তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে তখনই আমরা কাজ শুরু করব।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু প্রক্রিয়াটা অনেক দূর এগিয়ে আছে সেক্ষেত্রে আমাদের এ তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে দল হিসেবে সরকার যখনই বলবেন তখনই আমরা তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রস্তুত করতে পারব। সুতরাং এই ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দূর্বলতা নেই, সমস্যা নেই। আমাদের তদন্ত প্যারালাললি চলছে, যদিও আলাদাভাবে আমরা দল হিসেবে বিচারের জন্য তদন্ত রিপোর্টটা সেভাবে করছি না। এখন শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই আছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *