■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
শহীদ শরীফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার ও বাংলাদেশকে ভারতের প্রভাবমুক্ত করার দাবিতে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে একযোগে অবরোধ কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।
সংগঠনের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে শাহবাগে অনুষ্ঠিত অবস্থান কর্মসূচিতে এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, রোববার সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই অবরোধ চলবে। তিনি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আজ এখানে এসেছেন, তারা যেন আগামীকালও ঠিক ১১টায় শাহবাগে উপস্থিত হন এবং ইনসাফের এই লড়াই অব্যাহত রাখেন। তিনি সতর্ক করেন, কোন প্ররোচনায় বা কারো চাপের মধ্যে এই অবরোধ তুলে নেওয়া যাবে না।
জাবের দাবি করেন, এই অবরোধ শুধু হাদি হত্যার বিচারের জন্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের ভারতীয় প্রভাব থেকে মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাদি হত্যার বিচারের বিষয়ে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেন, তবে তিনি তাকে মানবেন না। তিনি আরও বলেন, ইনসাফের লড়াইয়ে তারা কোনো ধরনের আপোস করবেন না।
বক্তব্যে তিনি কিছু গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করেন এবং বলেন, কিছু মিডিয়া ভুল তথ্য প্রচার করছে, যেমন তারা দাবি করছে ইনকিলাব মঞ্চ ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ করার পরিকল্পনা করছে, যা সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের অফিসিয়াল পেজ থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কোনও মিডিয়ার খবরের ওপর ভরসা করা যাবে না।
জাবের আরও জানান, গত কয়েকদিন ধরে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তারা মৃত্যুকে ভয় করেন না এবং ‘শাহাদাতের তামান্না’ নিয়ে রাজপথে রয়েছেন। তিনি উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেন, ‘যদি আমরা শহীদ হয়ে যাই, আপনারা কি ইনসাফের এই লড়াই থামাবেন?’ উপস্থিত ছাত্র-জনতা ‘না’ বললে তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এর আগে রাত ১১টার দিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী শাহবাগে আসেন। সেখানে উপদেষ্টা আন্দোলনরত জনতার উদ্দেশে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের অগ্রগতি তুলে ধরেন। ৭ জানুয়ারির মধ্যে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করার কথাও অঙ্গীকার করেন।
বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিনি ওসমান হাদির একজন গুণগ্রাহী। তিনি হাদিকে নিজের ভাই মনে করেন। দেশের জন্য তাঁকে আরও বেশি দিন প্রয়োজন ছিল। যেই মানুষের মৃত্যুতে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ মানুষ জানাজা পড়ে, সেই মানুষের হত্যার বিচার আসলে একটি জাতীয় কর্তব্য।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, শহীদ ওসমান হাদিকে যারা খুন করেছে, এর পেছনে যারা কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। মনে রাখতে হবে, একটা শত্রুপক্ষের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাজটা করতে হচ্ছে। যে তথ্যটা বলা হবে, সেটি যেন শত্রুকে কোনোভাবে সাহায্য না করে।
উপদেষ্টার বক্তব্যের আগে ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার তদন্তের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, এ ঘটনার পেছনে কারা আছে, তা উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা বাহিনীকে নিয়োগ করেছে সরকার। ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের যথেষ্ট অগ্রগতি আছে। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। ২১৮ কোটি টাকা সই করা চেক উদ্ধার করা হয়েছে। যথেষ্ট অগ্রগতি আছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ৭ জানুয়ারির মধ্যে এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
গত ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন শরিফ ওসমান হাদি। এরপর প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
