■ ফিরোজ আহমেদ ■
মাহবুব মোর্শেদের চিন্তাটা ভাবনা জাগায়। যেমন প্রথম বাক্যটার সাথে আমি সম্পূর্ণরূপে একমত! কিন্তু পরের বাক্যগুলো নিয়ে আমি নিশ্চিত না। তাজউদ্দীন আহমদ পরিবারের কাউকে যেহেতু ঘনিষ্ঠভাবে চিনি না, নানান কথাবার্তায় তাদের একেকজনকে একেক রকম মনে হয়েছে, পিতার প্রতি শ্রদ্ধার অনুভূতির বাইরে তারা ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার মানুষ, ভারত বিষয়েও মনে হয় না তাদের কোন ঐকমত্য থাকবে।
কিন্তু ভারত প্রসঙ্গটাই আগে ফায়সালা করার জন্য কিছু পর্যবেক্ষন তুলে রাখা যাক। পৃথিবীতে কোন ইতিহাস চর্চাই পরম নিরপেক্ষ নয়। তবে এরপরও ইতিহাস লেখায় কিছু যৌক্তিক পদ্ধতির চর্চা করা হয়ে থাকে, যেখানে চেষ্টা করা হয় পছন্দ মোতাবেক তথ্য ও নিদর্শন বাছাই না করে যথাসম্ভব সকল উপাদানকে বিচার করার। সাধারণত প্রচারধর্মী ইতিহাস রচনার বৈশিষ্ট্য হলো নিজ মতের সুবিধা অনুযাযী তথ্য বাছাই ও প্রচার। আরেকটু গভীরে যেতে পারলেই ইতিহাসের এক একটা মানুষ ও ঘটনাকে তাদের জটিলতাসহ বিচার করা সম্ভব হয়।
মাহবুবকে উপলক্ষ করেই আমরা অল্প কিছু নিদর্শন যাচাই করার চেষ্টা করি। মাহবুব বলেছেন, “এই পরিপ্রেক্ষিতে মনে রাখতে হবে, তাজউদ্দিন আহমদ ও তার পরিবার সবসময় শেখ মুজিব ও তার পরিবারের চাইতে ভারতের অধিক আস্থাভাজন ছিলেন।”
এটা কি সত্যি? তাহলে তাজউদ্দীনের আওতার বাইরে মুজিববাহিনী গড়ে তোলার প্রয়োজন হলো কেন?
এই প্রশ্নটার মাঝেই উত্তরটাও আছে। মুজিববাহিনী, যা মূলত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজনকে নিয়ে গঠিত ছিল, এবং যেটা পরবর্তীতে রক্ষীবাহিনীতে রূপান্তরিত হয়, সেটাই বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের একচ্ছত্র একনায়কতন্ত্রের, এবং বাংলাদেশে প্রথম কার্যত ফ্যাসিবাদী শাসনের ভিত্তি ছিল। এই কাঠামোটি সম্ভবত শেখ মুজিবুর রহমানের চাইতেও বেশি বিশ্বাসযোগ্য ছিল ভারত রাষ্ট্রের কাছে। প্রয়োজনে এই আলাপ আরও বিস্তারিতভাবে করা যাবে।
মনে রাখতে হবে আওয়ামী লিগের মাঝে এমনকি শুধু শেখ মুজিবুর রহমান আর তাজউদ্দীনই ছিলেন না—যে তাজউদ্দীনকে তিনি মন্ত্রীসভা থেকেও বিদায় করে দিয়েছিলেন, এবং যে তাজুদ্দীন বাকশালেও অংশ গ্রহণ করেননি একে সহমরনের পার্টি হিসেবে উল্লেখ করে—আওয়ামী লীগে খোন্দকার মোশতাকের মত জনপ্রিয় ও প্রভাবশালি নেতাও ছিলেন। বলতে গেলে দলের মাঝে তিনিই আবার ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠতম মিত্র। খোন্দকার মোশতাকের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের বিষোদগার বিষয়ে কথা কেবল সিপিবির নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। অন্য সকল উৎস জানায় যে এরা দুই জন পরস্পরের গভীর বন্ধু ছিলেন।
আওয়ামী লীগ কি পুনর্বাসিত হতে পারবে? তাজউদ্দীনের পরিবারকে কেন্দ্র করে? আমার আসলে এটাই বিশ্বাস হয় না যে, তাজউদ্দীনের পরিবার আওয়ামী লীগের হাল ধরতে আগ্রহী হবে। কোন কারণ দেখি না। বাংলাদেশে তাদের বিশালাকার কোন রাজনৈতিক স্বার্থ বা আগ্রহ আছে, বা থাকলেও সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব, এটা মনে করছি না। কিন্তু, ১৯৭৫ এর পর আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হতে পেরেছিলো, কারন তারা কোন অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়নি। এটা গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের আগেও এদেশের একটা বড় অংশের মানুষ পাকিস্তানপন্থী ছিল। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা বাঙালী জাতির মন থেকে পাকিস্তানকে মুছে দিয়েছে। আজও গণহত্যার প্রশ্নটা বাংলাদেশে একটা সীমারেখা। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের হত্যাযজ্ঞ বাংলাদেশের ৩৫-এর নিচে বয়স এমন প্রায় গোটা তরুণ জনগোষ্ঠীর মন থেকে আওয়ামী লীগকে নাই করে দিয়েছে। অন্তবর্তী সরকার কত খারাপ কাজ করেছে, তা দিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করতে যাবে না। বরং তারা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে এই দলের প্রত্যাগমন ঠেকিয়ে রাখবে, অন্তত বহু বছর। বাংলাদেশের ওপর তাদের আরোপ করতে গেলে বিপুল রক্তক্ষয় আর শক্তি খরচ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ কি পুনর্বাসিত হতে পারবে? তাজউদ্দীনের পরিবারকে কেন্দ্র করে?
আমার আসলে এটাই বিশ্বাস হয় না যে, তাজউদ্দীনের পরিবার আওয়ামী লীগের হাল ধরতে আগ্রহী হবে। কোন কারণ দেখি না। বাংলাদেশে তাদের বিশালাকার কোন রাজনৈতিক স্বার্থ বা আগ্রহ আছে, বা থাকলেও সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব, এটা মনে করছি না।
কিন্তু, ১৯৭৫ এর পর আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হতে পেরেছিলো, কারন তারা কোন অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়নি। এটা গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের আগেও এদেশের একটা বড় অংশের মানুষ পাকিস্তানপন্থী ছিল।
২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা বাঙালী জাতির মন থেকে পাকিস্তানকে মুছে দিয়েছে। আজও গণহত্যার প্রশ্নটা বাংলাদেশে একটা সীমারেখা।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের হত্যাযজ্ঞ বাংলাদেশের ৩৫-এর নিচে বয়স এমন প্রায় গোটা তরুণ জনগোষ্ঠীর মন থেকে আওয়ামী লীগকে নাই করে দিয়েছে। অন্তবর্তী সরকার কত খারাপ কাজ করেছে, তা দিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করতে যাবে না। বরং তারা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে এই দলের প্রত্যাগমন ঠেকিয়ে রাখবে, অন্তত বহু বছর। বাংলাদেশের ওপর তাদের আরোপ করতে গেলে বিপুল রক্তক্ষয় আর শক্তি খরচ করতে হবে।
খোন্দকার মোশতাক আহমেদ মার্কিনপন্থী ছিলেন। মুজিব বাহিনীর গোটা অংশ প্রবলভাবে ভারতপন্থী ছিলো।
শেখ মুজিবুর রহমান কী ছিলেন?
অধিকাংশ নিদর্শন বলে যে শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন মার্কিন বলয়ের সাথেই। একইসাথে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ভাঙার বিষয়েও দ্বিধান্বিত ছিলেন। পাকিস্তান বিরোধী তরুণ নেতৃত্বের জাতিয়তাবাদী চাপের মুখে তিনি ভূমিকা রেখেছেন, কিন্তু কখনোই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাননি।
ভাসানী কোন অর্থে ভারতপন্থী ছিলেন না, চীনপন্থী হিসেবে যে পরিচিতি তার ছিল, সেটা চীনের সাথে যোগাযোগ নয়, বরং মূলত তা ছিল আদর্শিক একটা নৈকট্যবোধ। কৃষকমুক্তির, জাতি গঠনের ও রাষ্ট্র নির্মানের যে স্বপ্ন চীন বাস্তবায়ন করেছিলো কোন রকম বিদেশী প্রভাবকে উপেক্ষা করে, তা তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। বলা যায় এই স্বপ্নের গুনেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে চীনের বিরোধিতার বিরোধিতা করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যেমন চীনও দ্রুতই তাকে মুক্ত করতে সাহায্য করা রাশিয়ার প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে এসেছিলো।
এই বিষয়টাকেই বলা যায় জাতীয় বোধের বিকাশ। জাতি গঠনের স্পর্ধা ও আকাঙ্ক্ষা।
কিছু কিছু নিদর্শন থেকে মনে হয়, তাজউদ্দীনের মাঝেও এই আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ছিল। যেমন ১৯৭৪ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলা একাডেমীতে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন যে “আমি চ্যালেঞ্জ প্রদান করছি, যদি কেউ কোন দিন প্রমাণ করতে পারেন যে আমার প্রধানমন্ত্রীত্বের কালে ভারতের সাথে কোন গোপন বা প্রকাশ্য চুক্তি করেছি তবে আমি ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে প্রস্তুত আছি… মিসেস গান্ধীর সাথে রাতে দীর্ঘ আলোচনার পর আমাদের সিদ্ধান্ত ভারতকে জানিয়ে দেই যে আমরা স্বাধীনতার সম্মিলিত শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম করতে প্রস্তুত, তবে তা হবে আমাদের শর্তানুযায়ী।”
মনে রাখবেন, ১৯৭৪ সালের বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ধীরে ধীরে শেখ মুজিবুর রহমানের একক করতলগত হয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের মাঝে তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে এবং বাকি অংশগুলো কোনঠাসা হয়েছে। এটিও মনে রাখতে হবে যে দলের বাকিদের দমন করার প্রয়োজনেই সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের প্রয়োজন হয়েছিল। তাজউদ্দীন নিজেই এর পর আর বেশিদিন মন্ত্রীত্ব করতে পারেননি।
ভারতের বেশি বিশ্বাসযোগ্য হলে তাকে মন্ত্রীসভা থেকে বিদায় নিতে হতো না।
আওয়ামী লীগে অন্তত চারটি রাজনৈতিক প্রবণতা ছিল। ভারত-রুশপন্থী: এক বন্ধনীর মাঝে উল্লেখ করা হলেও এদের একটা মজার বৈশিষ্ট্য হলো এরা পরস্পরকে প্রবল ঘৃণা করতেন এবং সে কারণেই শেখ মুজিবুর রহমান তাদের একমাত্র ভরসা ছিলেন। সোভিয়েত রাশিযার বাংলাদেশে কোন প্রত্যক্ষ স্বার্থ না থাকলেও তাদের মিত্র ভারতের প্রয়োজনে তারা বাংলাদেশে তাদের অনুগত রাজনৈতিক দল সিপিবিকে কার্যত একটি ভারতপন্থী দলে পরিণত করে। এর ধারাবাহিকতা আমরা ৫ অগাস্ট, ২০২৪ পর্যন্ত দেখেছি। ভারতপন্থী অংশটার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল চুরি ও দখল। রুশপন্থী অংশটি আওয়ামী লীগ ও হাসিনার মতদর্শিক সমর্থনের ভিত্তি তৈরি করতো। এরা ছিলেন মধ্যবিত্ত ও ভদ্রলোক শ্রেণির।
মার্কিনপন্থী।খন্দকার মোশতাক এবং তার সাথে আরও কিছু রাজনীতিবিদ। শেখ মুজিবুর রহমান আদতে এই ধারার প্রধান নেতা ছিলেন। বরাবরই। এটাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তার যাবতীয় দ্বিধা আর আত্মসমর্পণের কারণ।
জাতীয় পুনর্গঠন আকাঙ্ক্ষী। আমার ধারণা এটা আওয়ামী লীগে একরকম শক্তিশালী ছিল। কিন্তু ক্রমশঃ ভারতের প্রশিক্ষিত মুজিববাহিনীর চাপ এবং পরবর্তীতে দলীয় কোন্দলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়, ভারতপন্থী বলয়ে আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা বাতিল হয়ে যেতে বাধ্য হয়। তাজুদ্দীনের অপসারণ এই ছত্রভঙ্গতার চূড়ান্ত মূহুর্ত।
অনুগত যুবলীগ-ছাত্রলীগ থাকলেও কেন তাজউদ্দীনকে লেগেছিল ভারতের? কারণ এরা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের তোড়ে বিশালাকার হলেও অন্য বড় মতাদর্শের ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার কোন সামর্থ্য আওয়ামী লীগের উগ্র জাতিয়তাবাদীদের ছিল না। সেই গ্রহণযোগ্যতা যে অল্প কয়েকজন মানুষের ছিলো, তাদের মাঝে তাজউদ্দীন অন্যতম।
কাজেই তাজউদ্দীনকে গুরুত্ব দিলেও ভবিষ্যতের কথা ভেবেই সমান্তরালে মুজিববাহিনীকে পরিপুষ্ট করেছিল ভারত। কারণ তারা জানতো, বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের বা শেখ মুজিবুর রহমানের সামর্থ নেই এককভাবে দেশকে নিয়ন্ত্রণের। কাজেই ভবিষ্যতের রক্ষীবাহিনী হিসেবেই মুজিববাহিনীর জন্ম হয়েছিল।
তাজউদ্দীনকে কেন্দ্র করে হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কি আবারও পুনর্বাসিত হতে পারবে? বা ভারত কিভাবে প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে?
আওয়ামী লীগের বাংলাদেশে পুনর্বাসিত হবার কোন সুযোগ বা সম্ভাবনা আদতে নেই। ১৯৭৫ সালে উচ্ছেদ হবার পর তারা ফিরে আসতে পেরেছিলো, কারণ জনগণ নয়, সামরিক বাহিনী তাদের উচ্ছেদ করেছিল। সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যু একটা জাতীয় সহানুভূতি তৈরি করেছিলো, একইসাথে তাদের প্রতি দুঃশাসনজনিত ঘৃণাও বেশ শক্তিশালীই ছিল।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগকে উচ্ছেদ করেছে জনগণ। আওয়ামী লীগকে ফিরে আসতে হলে এই প্রায় দুই হাজার শহিদের পরিবারের সাথে, বুলেট বিদ্ধ হাজার হাজার তরুণের পরিবারের সাথে, প্রাণের ঝুঁকি নেয়া লাখ লাখ তরুণের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। এটা খুব সম্ভবত ভারতও জানে। হাসিনার পুনর্বাসন সম্ভব না। শেখ মুজিবুর রহমানও একটা ইতিহাসের চরিত্র হিসেবেই থাকবেন, তাকে জাতির পিতা বানানোর চেষ্টা আর সফল হবে না।
আওয়ামী লীগ কি পুনর্বাসিত হতে পারবে? তাজউদ্দীনের পরিবারকে কেন্দ্র করে?
আমার আসলে এটাই বিশ্বাস হয় না যে, তাজউদ্দীনের পরিবার আওয়ামী লীগের হাল ধরতে আগ্রহী হবে। কোন কারণ দেখি না। বাংলাদেশে তাদের বিশালাকার কোন রাজনৈতিক স্বার্থ বা আগ্রহ আছে, বা থাকলেও সেটা বাস্তবায়ন সম্ভব, এটা মনে করছি না।
কিন্তু, ১৯৭৫ এর পর আওয়ামী লীগ পুনর্বাসিত হতে পেরেছিলো, কারন তারা কোন অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়নি। এটা গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের আগেও এদেশের একটা বড় অংশের মানুষ পাকিস্তানপন্থী ছিল।
২৫ মার্চ রাতের গণহত্যা বাঙালী জাতির মন থেকে পাকিস্তানকে মুছে দিয়েছে। আজও গণহত্যার প্রশ্নটা বাংলাদেশে একটা সীমারেখা।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের হত্যাযজ্ঞ বাংলাদেশের ৩৫-এর নিচে বয়স এমন প্রায় গোটা তরুণ জনগোষ্ঠীর মন থেকে আওয়ামী লীগকে নাই করে দিয়েছে। অন্তবর্তী সরকার কত খারাপ কাজ করেছে, তা দিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগের সাথে তুলনা করতে যাবে না। বরং তারা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে এই দলের প্রত্যাগমন ঠেকিয়ে রাখবে, অন্তত বহু বছর। বাংলাদেশের ওপর তাদের আরোপ করতে গেলে বিপুল রক্তক্ষয় আর শক্তি খরচ করতে হবে।
জার্মানিতে যেমন উগ্রবাদের বয়স্ক সমর্থকেরা রাতারাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, পরাজয়ের পর ধীরে ধীরে বিলীন হয়েছে, এদেশেও তাদের পরিস্থিতি সেটাই হবে।
বরং এই সময়ে আলোচনা হবার দরকার বাঙালী জাতিয়তাবাদের কি হবে? অসাম্প্রদায়িকতার? এর রাজনৈতিক আকর্ষণ যদি থেকে থাকে, কোন শক্তি তাকে ধারণ করে সামনে আগাবে?
বাংলাদেশে জাতি গঠনের প্রশ্নে সামনের দিনে এই বিষয়গুলো আরো আরো গুরুত্ব নিয়ে উঠবে।
এই জন্যই বাঙালী জাতীয়তাবাদের সাথে ভারতের সম্পর্কটা নিয়ে সামনের দিনে আরও আরও আলাপ করতে হবে।
তাজউদ্দীন আহমেদ বিতর্কের ঊর্ধ্বে? আমার মনে হয় না। তার নিজের মতামতগুলো আমরা খুব পরিস্কার করে যে পাই না, মন্ত্রীসভা থেকে বিদায় নেয়ার নিজেকে পাশে সরিয়ে রেখে তিনি বহুভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গঠনকালীন সংকটগুলো জানতে পারা থেকে আমাদের বঞ্চিত রেখেছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি দায়বোধের পাশাপাশি তার শঠতা ও দোদুল্যমানতা নিয়েও সচেতন ছিলেন, এমন সাক্ষ্য বহু মানুষের কথায় পাই। কিন্তু এই বিষয়ে তার আরও খোলামোলা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু খুব সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময় ও ইতিহাস তার বিরুদ্ধে ছিল, আর সাংগঠিনক ব্যক্তিত্বের অভাবে না, বরং ভারতের সমর্থক দেশীয় বাহিনিগুলোই তাকে বাতিল করে দিতে বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে যদি জাতি গঠন প্রধান কর্মসূচি হতো, তাজউদ্দীন আহমদ হয়তো তার অন্যতম প্রধান কাণ্ডারী হতে পারতেন।
লেখক: বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য