■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেফতার হয়ে আদালতে নিজের হাতকড়া উঁচিয়ে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেছেন, সাংবাদিকরা সন্ত্রাসী-দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এই হাতে লেখে। দেখেন আমার এই হাতেই হাতকড়া। বলুন, সাংবাদিকরা কি লিখবে। কার পক্ষে লিখবে।
‘আপনাদের কি মনে হয় আমরা সন্ত্রাসী? মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বলা বা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলা, এগুলো কি সন্ত্রাসী কাজ? দেশের সূর্য সন্তানেরা এই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। এ দেশকে যারা স্বাধীন করেছেন, তাদের সঙ্গে থাকা মানে কি সন্ত্রাসী কাজ করা?’ শুক্রবার (২৯ আগস্ট) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চত্বরে এসব মন্তব্য করেছে গ্রেফতারকৃত সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না।
এদিন শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবির অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক।
এদিন সকাল ১০টার দিকে আসামিদের আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর সাড়ে ১০টায় তাদের সবার মাথায় হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও অধ্যাপক কার্জন বাদে বাকিদের পেছনে পিছমোড়া করে হাতকড়া বেঁধে এজলাসে তোলা হয়। তোলার সময় হাতকড়া পরানো অবস্থায় হাত উঁচু করে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না বলেন, সাংবাদিকরা সন্ত্রাসী-দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এই হাতে লেখে। দেখেন আমার এই হাতেই হাতকড়া। বলুন, সাংবাদিকরা কি লিখবে। কার পক্ষে লিখবে।
পরে তাদের কাঠগড়ায় রাখা হয়। শুনানি শুরু হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক তৌফিক হাসান সবাইকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। শুনানিতে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. শামসুদ্দোহা সুমন সব আসামিকে কারাগারে আটক রাখার জোর দাবি জানান। এ সময় পান্নার আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখী জামিন চান।
শুনানির একসময় পান্না হাত উঁচু করে কথা বলতে চান। তখন বিচারক বলেন, আপনার আইনজীবী আছে নাহ। তখন আসামি বলেন, হ্যাঁ। তাও কিছু বলতে চাই। এ সময় পান্না বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলা কি দোষ। আমরা সাংবাদিকরা কি কথা বলতে পারব না। তখন রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন এর বিরোধিতা করেন। এ আইনজীবী বলেন, এ সাংবাদিক আওয়ামী লীগের সহযোগী। এত বছর সুবিধা নিয়ে এখন আদালতে সবাইকে থামিয়ে কথা বলতে চায়। তখন আসামি পান্না ও আইনজীবী নয়ন দুই দিক থেকে উচ্চ বাক্যে কথা বলতে থাকেন। এজলাসে তখন হট্টগোল দেখা যায়। এরপর শুনানি শেষে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিকে বেলা ১১টা ২১মিনিটের দিকে শুনানি শেষে সাংবাদিক পান্নাসহ সব আসামিকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। এ সময় আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের দেখে চিৎকার করে পান্না বলেন, এই দেখেন আমার হাতে হাতকড়া। তখন পিছমোড়া করে হাত বাঁধা সেটা দেখানোর চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাকে বাধা দেয়। তখন আবারও পান্না চিৎকার করে বলেন, ‘হাতকড়া পরাবেন, দেখাতে দিবেন না। হ্যাঁহ, এটা কোন ধরনের কথা।’ এই কথা তিনি বারবার বলতে থাকেন।
এরপর তাকে হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে বেলা ১১টা ৫১ মিনিটে সিএমএম হাজতখানা থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়ার জন্য প্রিজনভ্যানে সব আসামিকে ওঠানো হয়। প্রিজনভ্যান থেকে পান্না গ্রিলের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে বলেন, ‘সাংবাদিকরা কি কথা বলতে পারবেন না, সাংবাদিকদের হাতে হাতকড়া- এটা কোন দেশ? কোথায় আছি আমরা।’ এরপর প্রিজনভ্যান যেতে থাকে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিআরইউতে মঞ্চ ৭১ নামে একটি ব্যানারে গোলটেবিল আলোচনা চলছিল। এ সময় একদল ব্যক্তি নিজেদের জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ১৬ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এদিকে গোলটেবিলের এ ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়।