■ চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ■
ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতি ও ওএসডি করার প্রতিবাদে ফৌজদারহাটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন।
শনিবার (৪ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির কারণে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত মহাসড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের দুই পাশে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী।
ব্যাংককর্মীদের এই কর্মসূচিতে দেশের ব্যস্ততম মহাসড়কটিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের সৃষ্টি হয় উভয় পাশে ১০ কিলোমিটার তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ওয়াই জংশন এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা রিভারভিউ কমিউনিটি সেন্টার থেকে মিছিল নিয়ে মহাসড়কে বসে পড়েন। এতে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক এবং পিএবি সড়কের (পটিয়া, আনোয়ারা ও বাঁশখালীমুখী সড়ক) যান চলাচল প্রায় ২০ মিনিট বন্ধ থাকে। পরে কর্ণফুলী থানা–পুলিশের অনুরোধে তাঁরা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রহসনমূলক দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়। সে পরীক্ষা তাঁরা বর্জন করে আন্দোলনে নামেন। পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া এবং আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে গতকাল সোমবার ২০০ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত ও ৪ হাজার ৯৫৩ জনকে ওএসডি করা হয়।
অভিযোগ করে ব্যাংক কর্মীরা বলেন, ‘এই জুলাই বিপ্লব তো চাকরি দেওয়ার কথা ছিল, চাকরি কেড়ে নেওয়ার কথা ছিল না।’ তাঁদের দাবি, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রহসনমূলক পরীক্ষা নেয় এবং এর পর থেকেই অন্যায় নিপীড়ন শুরু করে।
আন্দোলনরত ব্যাংক কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রায় ৪০০ জন কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ওএসডি করে কর্মস্থলে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের আর ধৈর্য ধারণের সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল, ওএসডি প্রত্যাহারসহ মোট ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের এই দুঃসহ পরিস্থিতি ও ন্যায্য দাবির কথা দেশের মানুষ ও সরকারের কাছে পৌঁছে দিতেই এ আন্দোলন।
ব্যাংকটির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা এমদাদ হোসাইন বলেন, সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী কতটুকু অসহায় সেই কথা বলতে আমরা মাঠে নেমেছি। আমরা আজকের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা আমাদের এই সংকট সমাধান করতে এগিয়ে আসুন।
মানবন্ধনে অংশ নেওয়া চাকরিচ্যুত আরেক ব্যাংক কর্মকর্তা নুর উদ্দিন বলেন, ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে আমাদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিয়েছে। আমাদের অ্যাকাউন্টে থাকা বেতনের টাকাও আমরা তুলতে পারছি না। বাসার বাজার খরচের টাকাও আমাদের হাতে নেই।
অবরোধকারীরা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৪০০ কর্মকর্তাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ৪-৫ হাজার কর্মকর্তাকে ওএসডি করে কর্মস্থলে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। এতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, পরিবার নিয়ে পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।
ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুতদের ৬ দফা দাবি
১. চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা কর্মকর্তাদের স্বপদে পুনর্বহাল করতে হবে।
২. প্রহসনমূলক পরীক্ষা বয়কটের কারণে কর্মকর্তাদের যে পানিশমেন্ট ট্রান্সফার দেওয়া হচ্ছে, তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৩. বৈষম্যহীন ও রাজনীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৪. শর্ত আরোপ করে সব ধরনের অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট বন্ধ করতে হবে।
৫. চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের উপর চালানো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং পুনরায় কর্মস্থলে তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।
৬. পরীক্ষা বর্জনের জন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে সাধারণ ডায়েরি ও সাইবার ক্রাইমে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে, তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
এর আগে শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা রোববার থেকে টানা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে শনিবার সকাল থেকেই মানববন্ধন ও অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের আন্দোলন শুরু হয়। পরে আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। তাঁদের হুঁশিয়ারি, পূজার ছুটির মধ্যে দাবি মানা না হলে আগামী রোববার থেকে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হবে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বিপুলসংখ্যক কর্মী সরাসরি সিভি দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার বাসিন্দা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রদবদল আসে ওই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে। ২০১৭ সালের পরে ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা আয়োজন করে। ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তার অংশগ্রহণের কথা থাকলেও মাত্র ৪১৪ জন পরীক্ষা দেন। যারা আসেননি, সেই ৪ হাজার ৯৭১ জনকে পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়। আর পরীক্ষার বিরোধিতা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে দুই দফায় চাকরিচ্যুত হন ৪০০ কর্মী।