■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■
গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার চুক্তিতে সম্মতি দিয়েছে হামাস। গাজায় সরকার পরিচালনা করা ফিলিস্তিনের এই প্রতিরোধ সংগঠনটি একথা কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতাকারীদেরও জানিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
এর আগে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো বলেছিল, যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে শেষ মুহূর্তে এসে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলি মিডিয়া দাবি করে, মিশরের সিনাই উপত্যকা ও গাজার সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ে নতুন কিছু দাবি জানিয়েছে হামাস। গাজার কৌশলগত এই এলাকা বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে।
এরপরেই বিবিসির কাছে হামাসের কর্মকর্তা জানালেন, তাঁদের সম্মতি প্রদানের কথা। কাতারের দোহায় এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে সবশেষ আলোচনা হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যেই কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে জানাবে।
১৫ মাস ধরে গাজায় চলা যুদ্ধ ব্যাপক ধ্বংসের সূচনা করেছে। এই যুদ্ধ অবসানে অনেক চেষ্টা চালানোর পরেও সফল হওয়া যায়নি। তবে গত কয়েক মাস ধরে আলোচনার প্রেক্ষিতে এবার অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছিল কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কাতারের পররাষ্ট্র মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি গতকাল দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘চুক্তির একটি খসড়া এরমধ্যে হামাস ও ইসরায়েলকে দেওয়া হয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে (চুক্তির) যেসব বিষয়ে দ্বিমত বা উত্তেজনা ছিল– সেগুলোর একটা সমাধানে পৌঁছানো গেছে। এখন দোহা আলোচনায় বাকী বিষয়গুলো চূড়ান্ত করার ওপর মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে আমরা একটি (যুদ্ধবিরতি) চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আছি।’
মাজেদ আল-আনসারি আভাস দেন, চূড়ান্ত হওয়ার পরে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হবে।
এই সংবাদটি এমন এক সময়ে এলো, যখন গাজা অঞ্চলে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। সেই সঙ্গে সেখানে মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে।
উপত্যকাটিতে অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে গত ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যদিও ল্যানসেট জানিয়েছে এই সংখ্যা ৪০ শতাংশ কম।
উল্লেখ্য, কাতার এবং অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি এর আগে বেশ কয়েকবার দেওয়া হলেও ইসরাইল বারবার এটি এড়িয়ে যাচ্ছিল। যা ফলে হামাসের সঙ্গে তাদের শান্তি আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ জানুয়ারির অভিষেকের ঠিক আগে চূড়ান্ত চুক্তিটি চূড়ান্ত হলো। যেখানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
গাজার প্রধান ফিলিস্তিনি সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, হামাসের প্রতিনিধিদল মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং বন্দীদের ফেরতের বিষয়ে তাদের সম্মতি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামাস চুক্তির মৌখিক সম্মতি দিয়েছে এবং চূড়ান্ত লিখিত সম্মতি দেওয়ার জন্য আরও তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’আর জানিয়েছেন, তিনি ইউরোপ সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ রাতেই ইসরায়েল ফিরে আসছেন। ফিরেই তিনি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ও সরকারের ভোটে অংশ নেবেন। সম্ভবত আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস–নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র ব্যক্তিরা নিরাপত্তা বাধা ভেঙে ইসরায়েলি এলাকায় প্রবেশ করে। তারা ১ হাজার ২০০ সেনা ও সাধারণ নাগরিককে হত্যা করে এবং ২৫০ জনেরও বেশি বিদেশি ও ইসরায়েলি নাগরিককে বন্দী করে নিয়ে যায়।
তীব্র শীতে শত শত মানুষ তাঁবু ও অস্থায়ী আশ্রয়ে কোনোরকম টিকে আছে।
ট্রাম্প তার অভিষেকের আগে বারবার দ্রুত চুক্তি করার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, বন্দীদের মুক্তি না দিলে ‘মারাত্মক পরিণতি’ হবে। তার মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দলের সঙ্গে মিলে চুক্তিটি সম্পন্ন করতে কাজ করেছেন।
এখন ইসরায়েলে বন্দীদের ফিরে আসা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার ডানপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ কমাতে পারে। যেখানে গত বছরের ৭ অক্টোবরের নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য নেতানিয়াহুর সরকার তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এই সংঘাত পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে ইরান–সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইরাক ও ইয়েমেনের গোষ্ঠীগুলো ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এই চুক্তিটি ইসরায়েলি অভিযানে হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার পর চূড়ান্ত হলো। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নেতাদের হত্যার মাধ্যমে ইসরায়েল কৌশলগতভাবে এগিয়ে গেছে।