গাজা দখলের পরিকল্পনার অনুমোদন ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায়

■ নাগরিক নিউজ ডেস্ক ■

ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে গাজা উপত্যকার গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা। মন্ত্রিসভায় এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে এই ইস্যুতে এখনো প্রকাশ্যে কিছু জানায়নি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।

হামাসকে পরাজিত করার প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে রাজনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা। এর অংশ হিসেবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা সিটি দখলের প্রস্তুতি নেবে, একই সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকা বেসামরিক জনগণকে মানবিক সহায়তা দেবে।

ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে গাজা সিটির সব ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে কেন্দ্রীয় শরণার্থী শিবির এবং অন্যান্য এলাকায় সরিয়ে নেওয়া। এ সময় গাজা সিটিতে অবস্থানরত হামাস যোদ্ধাদের অবরুদ্ধ করা হবে এবং পাশাপাশি স্থল অভিযান চালানো হবে।

বেশ কয়েক দিন ধরেই গাজা সিটি দখলের ইসরায়েলি এই পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। এরই মধ্যে এই ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্টও মন্তব্য করেছেন—‘গাজা সিটি দখল করা হবে কি না, সেটি ইসরায়েলের ব্যাপার।

গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, ইসরায়েল গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইসরায়েলের উদ্দেশ্য গাজার শাসন পরিচালনা করা নয়, বরং একটি নিরাপত্তা পরিধি গঠন করা। তিনি বলেন, ‘আমরা এর (গাজার) দখল রাখতে চাই না, আমরা শাসন করতে চাই না।’

ইসরায়েলি গণমাধ্যমে এর আগেই খবর প্রকাশ হয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই গোটা গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। গত সোমবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ এক প্রতিবেদনে নেতানিয়াহুর দপ্তরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ‘গাজা দখলের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।’

গাজায় ব্যবহারযোগ্য অস্ত্রের রপ্তানি স্থগিত করল জার্মানি

গাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেওয়ার পর দেশটিতে গাজা যুদ্ধে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি স্থগিত করেছে জার্মানি। 

শুক্রবার (৮ আগস্ট) এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ। এর কিছুক্ষণ আগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনায় ভোট দিয়ে অনুমোদন দিয়েছে। 

গাজা দখলের পরিকল্পনাকে চলমান ২২ মাসের সংঘাতের মধ্যে বড় ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এর একদিন আগে নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক মহলের ক্রমবর্ধমান নিন্দা সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী গোটা গাজা উপত্যকার পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। যুদ্ধ চলাকালে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

ফ্রেডরিখ মার্জ বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে জার্মান সরকার গাজা উপত্যকায় ব্যবহার হতে পারে এমন কোনো সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির অনুমোদন দেবে না, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত।’’

ইসরায়েলের “আত্মরক্ষার অধিকার” ও হামাসের হাতে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির পক্ষে অবস্থান বজায় রাখলেও মার্জ বলেন, ‘‘বেসামরিক মানুষের ওপর ক্রমবর্ধমান প্রাণহানিকে জার্মানি আর উপেক্ষা করতে পারছে না।’’

তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরও কঠোর সামরিক পদক্ষেপ, যা গতরাতে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে, আমাদের জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে এই লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্জিত হবে তা বোঝা।”

গাজায় নতুন করে বড় ধরনের স্থল অভিযান কবে শুরু হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে হাজার হাজার ইসরায়েলি সৈন্য মোতায়েন ও জোরপূর্বক বেসামরিক লোকজন সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হবে, যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করবে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে খাদ্যাভাব ও অপুষ্টিতে ৯৬ শিশু-সহ ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েল এখনো মানবিক সহায়তার সরবরাহে কড়াকড়ি অব্যাহত রেখেছে। জাতিসংঘ-সমর্থিত এক জরিপে সতর্ক করা হয়েছে যে গাজায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।

জাতিসংঘ ও বিভিন্ন এনজিওসহ মানবিক সংগঠনগুলোকে গাজার নাগরিকদের সহায়তা দিতে পূর্ণ ও স্থায়ী প্রবেশাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্জ। তিনি বলেন, “পরিকল্পিত এই সামরিক অভিযানের ফলে ইসরায়েলি সরকারের ওপর তাদের চাহিদা পূরণে আগের চেয়ে বেশি দায়িত্ব বর্তায়।”

তিনি দখলকৃত পশ্চিম তীর সংযুক্তির (অ্যানেক্সেশন) যে কোনো পদক্ষেপ থেকেও ইসরায়েলকে বিরত থাকতে সতর্ক করেছেন। চলতি বছরের জুলাইয়ে ইসরায়েলি সংসদ পশ্চিম তীর সংযুক্তির পক্ষে একটি প্রতীকী প্রস্তাব পাস করে।

জার্মান পার্লামেন্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত জার্মানি ইসরায়েলের জন্য ৪৮৫ মিলিয়ন ইউরো (৫৬৪ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের অস্ত্র রপ্তানির লাইসেন্স দিয়েছে, যা ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী হিসেবে জার্মানিকে তুলে ধরে।

নেতানিয়াহুর দপ্তর জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি নেবে এবং যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকা বেসামরিক জনগণকে মানবিক সহায়তা দেবে।” 

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *