■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শিক্ষার্থীদের টানা তিন দিন রাস্তায় অবস্থানের কর্মসূচির পর তাঁদের উত্থাপিত তিন দফা দাবি মেনে নিয়েছে সরকার।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ কাকরাইল মসজিদের মোড়ে আন্দোলনস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের এ কথা বলেন।
এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করেন তিনি। উপাচার্য রেজাউল করিম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আবাসন–সংকটের কথা ভেবে খুব দ্রুত অস্থায়ী হল নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সবকিছু করা হবে।
এরপর অনশনকারী এক শিক্ষার্থীকে পানি পান করিয়ে গণঅনশন ভাঙান ইউজিসি চেয়ারম্যান। এ সময় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। এরপর কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশন ভাঙলেও কিছু শিক্ষার্থী অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তিন দফা দাবি পূরণের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাঁরা অনশন ভাঙবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, কাকরাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে পানির বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
শুক্রবার (১৬ মে) ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ওই শিক্ষার্থীকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
ডিসি তালেবুর বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একজনকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলেই তাকে অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সেই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেওয়ার পর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। ছবিটিতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরাও মাহফুজ আলমের সঙ্গে রয়েছেন।
মাহফুজ আলমের নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তোলা ছবিটি পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়েছে, তথ্য উপদেষ্টার ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ হুসাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি অফিসে ওই শিক্ষার্থী এবং তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন তথ্য উপদেষ্টা। আন্দোলন শেষে উপদেষ্টা তাকে বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানান। এর আগে দুপুরে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হুসাইনকে অভিভাবকদের জিম্মায় হস্তান্তর করতে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা—এই তিন দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিন দফা বাস্তবায়নের দাবিতে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে লংমার্চ করেন জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে তাঁদের লংমার্চ কাকরাইলে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে বাধা পার হয়ে শিক্ষার্থীরা যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশত শিক্ষক–শিক্ষার্থী আহত হন।
এরপর ওই দিন বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁদের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যোগ দেন। এর পর থেকে টানা তিন দিন তাঁরা এই কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। এর মধ্যে আজ জুমার নামাজের পর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমাবেশ এবং বিকেল চারটা থেকে গণঅনশন শুরু করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।