ফের জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ফের অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে এ হামলা শুরু হয়। একপর্যায়ে কিছু লোক কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার পরপরই কিছু লোক জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালায়। তারা কার্যালয়ের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছিটায় এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে উত্তেজিত জনতা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পুলিশ পর্যায়ক্রমে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে কার্যালয়ের পাশে অবস্থান নিয়েছে। জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে কার্যালয়ের আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে।

তখনও বিক্ষোভকারীরা কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে পুলিশ এসে হামলাকারীদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। হামলাকারীদের সরাতে ও কার্যালয়ের আগুন নেভাতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ

এদিকে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে সংহতি সমাবেশ করে দলটির নেতাকর্মীরা। জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবি তোলা হয়।

সমাবেশ শেষে দলটির নেতাকর্মীরা পল্টনে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে রওনা দেয়। এরপরই জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার বলেন, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুনের সংবাদ পেয়েছি। আমাদের ইউনিট রওনা হয়ে গেছে। আমরা ৭টা ১৮ মিনিটের দিকে আগুনের সংবাদ পেয়েছি। এটা সহিংসতার আগুন তাই আমরা অনুমতিসাপেক্ষে টার্ন করছি।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল করিম ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, গণঅধিকার পরিষদ ব্যানার সহকারে মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। তারা জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে স্লোগান দিতে দিতে আগুন দেয়।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চায়, কেন আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এই কারণে? তাহলে যারা ছাত্রলীগ করেছে তারা এখন এনসিপি করেছে। তাহলে তাদের আগে নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। কারণ তারা তো সরাসরি ছাত্রলীগ করেছে।

রেজাউল করিম ভূঁইয়া আরও বলেন, বিএনপিসহ ৩২ দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, তাহলে তাদেরও নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি একটা অবস্থানে দাঁড়িয়েছে, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা বিরোধী দল হব। এই কারণে নির্বাচন পেছাতে এগুলো করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম বলেন, তারা এসে আগুন লাগি

এর আগে গত ৩০ আগস্ট জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় জাপা নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণঅধিকার নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এদিনও জাপা কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। পরে নুরুল হক নুরসহ নেতাকর্মীরা গণঅধিকার কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতিকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হামলায় নুরসহ অনেকে আহত হন। নুরুল হক নুর গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন।য়ে দিয়েছিল। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে, জলকামান দিয়ে আগুন নিভিয়ে দিয়েছে। এখন আপাতত কোনো সমস্যা নেই।

গণঅধিকার পরিষদের নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব

ন্ত্রাসবিরোধী আইনে গণঅধিকার পরিষদের নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) একাংশের মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আবারও অগ্নিসংযোগ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ দাবি জানান তিনি।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করলে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

শামীম হায়দার বলেন, গণঅধিকার পরিষদ আমাদের অফিসে আগুন দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে। আমরা সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গণঅধিকার পরিষদের নিষেধাজ্ঞা চাই। আমরা মনে করে এই দলটি রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। আমাদের যে আরপিও আছে, সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন থেকে এ দলকে ব্যান করা উচিত।

সরকারের সমালোচনা করে জাপার সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, বিগত সময়ে আমরা দেখেছি, যারা মব করতে এসেছিল, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যারা মবের ভিকটিম হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, তাদের অ্যারেস্ট করা হচ্ছে। আমরা এ অবস্থার পরিত্রাণ চাই।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র ও সরকারে চিড় ধরে গেছে। সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কামনা করি। এবং দোষী ব্যক্তিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করলে আমরা দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।

জাপা অফিসে আগে দুবার হামলা হয়েছে। সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত হলে আজ এ হামলা হতো কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শামীম হায়দার বলেন, তখন তাৎক্ষণিক যদি হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হতো, তাহলে কখনোই এ হামলা হতো না। সরকার এ বিষয়ে উদাসীন। সরকার চেয়ে চেয়ে দেখছে, আর মবতন্ত্রের রাজত্ব চলছে, মবকারীরা মব করে যাচ্ছে। সরকারের চেয়ে চেয়ে দেখার কারণে আজ মানুষের জীবন, সম্পত্তি হুমকির মুখে পড়েছে। এ নিয়ে সরকার দায় এড়াতে পারবে না।

তিনি বলেন, পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট ছিল। তবে পাশাপাশি যদি সেনাবাহিনী থাকলে হয়তোবা তারা এটা প্রতিহত করতে পারত। তবে পুলিশের জলকামান আসতে আসতেই তারা আগুন দিয়ে ফেলেছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *