জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রী আটক

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

পুরান ঢাকার আরমানিটোলাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসেনকে হত্যার ঘটনায় তার ছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত ছাত্রীর নাম বর্ষা আক্তার। জুবায়েদ তাকে বাসায় গিয়ে পড়াতেন।

রোববার (১৯ অক্টোবর) রাত ১১ টা ২০ মিনিটের বর্ষাকে তার নিজ বাসা রাজধানীর বংশালে নূর বক্স রোডে রৌশান ভিলা থেকে আটক করা হয়। এছাড়া বাড়ির বাকি সদস্যদেরও করা নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।

ছাত্রী বর্ষাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগান দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

নিহত জুবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া ছাত্রদলের রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি।

টিউশনি করতে যাওয়ার পথে খুন হওয়া জুবায়েদের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর মিডফোর্ট হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

ঘটনার পর আরমানিটোলায় অবস্থিত ওই বাসাটি ঘিরে রেখেছিল জবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, যে ভবনে তিনি টিউশনি করাতেন সেই বাসার ৩য় তলার সিড়িঁতে তার লাশ পড়ে ছিল। নিচ তলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত সিঁড়িতে রক্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। ওই বাসারই ৫ম তলায় জুবায়েদ রহমান একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতেন। ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি ও হায়ার ম্যাথ পড়াতেন জুবায়েদ।

ওই ছাত্রীর বরাত দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্র আরও জানান, পড়াতে আসার আগ মুহূর্তে ওই ছাত্রী জুবায়েদ হোসেনকে ফোন করে বলেন, আজ পড়াতে আসবেন কিনা। এ সময় তিনি (জুবায়েদ) বলেন, নূর বক্স লেনে প্রবেশ করেছেন এবং ওই ছাত্রী লোকেশন চেক করে দেখেন জুবায়েদ ওই লেনে প্রবেশ করেছেন।

জবির ওই ছাত্র আরও বলেন, সিঁড়িতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়া রক্ত দেখে বুঝা যাচ্ছে, প্রাণে বাঁচার জন্য জুবায়েদ নিচ তলা থেকে ৩য় তলা পর্যন্ত ছুঁটেছেন। এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল অথচ এই ভবনের কেউ বিষয়টি বলতে পারছে না। পরে এ ভবনের তিন তলায় থাকা একজন আমাদের বলেন, কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পাওয়ার পর ৫ তলায় ফোন করে এবং একজন গিয়ে দেখেন যে লাশটি তিন তলায় পড়ে আছে। এ বাড়িতে কোনো সিসিটিভি নেই। পাশের বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে বললে ওই বাড়ি থেকে জানায়, পেছন থেকে দুজন দৌঁড়ে আসছে, তবে তাদের ফেস বা চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। অথচ খুন করার পর সে দুজন বের হয়ে গেল, এ ঘটনাটি এ বাড়ির কেউ বলতে পারল না। মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা।

এ বিষয়ে লালবাগ জোনের ডিসি মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, “প্রাথমিকভাবে ছাত্রীকে আটক করা হয়েছে এবং বাড়ির অন্য সদস্যদেরও হেফাজতে রাখা হয়েছে। এছাড়া সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইতোমধ্যে আমরা দুইজনকে শনাক্ত করতে পেরেছি। তাদের আটকের জন্য আমাদের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। আশা করি খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদেরকেও আটক করতে সক্ষম হব। এখন এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।” 

এর আগে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে টিউশনির বাসার সিঁড়িতে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় জুবায়েদকে। এর দেড় ঘন্টা পর ক্যাম্পাসে ঘটনা জানাজানি হলে ওই বাসা ঘিরে রাখে পুলিশ। পরে দীর্ঘ সাড়ে ছয় ঘন্টা ধরে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও পিবিআই তদন্ত করে প্রাথমিক আলামত সংগ্রহ করে। 

জুবায়েদের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে।

হত্যার বিচার দাবিতে তাঁতিবাজার মোড়ে অবরোধ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

রোববার (১৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর মিছলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘রাস্তাঘাটে ছাত্র মরে, প্রশাসন কী করে?’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

অবরোধে অংশ নেওয়া শাহিন নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, একটি তাজা প্রাণ এভাবে ঝরে গেল, সেটা কল্পনাও করতে পারি না। তাকে নিয়ে তার পরিবারের কত স্বপ্ন ছিল, আজ সব শেষ হয়ে গেল। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।

হাবিব নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা আমাদের ভাই হত্যার বিচার চাই। অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনতে হবে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *