■ গাজীপুর প্রতিনিধি ■
গাজীপুরে চায়ের দোকানে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। পরিবার নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তুহিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিকেলে চান্দনা চৌরাস্তার ফুটপাত নিয়ে লাইভ করেন তুহিন। পরে রাত ৮টার দিকে তিনি নিজ ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখেন, ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য গাজীপুর চৌরাস্তা।’ সন্ধ্যার পরে মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন তিনি। হঠাৎ কয়েকজন মুখোশধারী তার ওপর হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
নিহত তুহিনের বন্ধু শামিম বলেন, ‘আমরা একসঙ্গেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন মহিলা কিছু লোকজন নিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছিল। তুহিন দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিল। এরপর থেকেই আর তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দোকানের সামনে জটলা দেখে এসে দেখি তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পড়ে আছে।’
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তুহিন। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলাকেটে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, ‘খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা জানার এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া ফুটেজ ও ক্লু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ তুহিন দৌড়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে পড়ে। পরে তিনজন আমার দোকানের ভেতরে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় দোকানের বাইরে দুজন রামদা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি বাধা দিতে গেলে তাঁরাও আমাকে কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় অনেক লোক তাকিয়ে দেখেছে, কিন্তু কেউ বাঁচাতে আসেনি।’
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. রবিউল হাসান বলেন, ‘আমরা এই ঘটনায় কিছু ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়েছি। কিছু ক্লুও পেয়েছি। আমরা এ ঘটনার জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করেছি। একজন সাংবাদিককে এভাবে কুপিয়ে হত্যা খুবই দুঃখজনক।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি রাত ৮টা ৫ মিনিটের দিকে ঘটেছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমাদের টিম কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, যেভাবে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ঘটনাটির প্রাথমিক মোটিভ থেকে বোঝা যাচ্ছে প্রচণ্ডতম ক্ষোভ থেকে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। আশা করি আজ রাতের মধ্যেই এর একটা সুরাহা করতে পারব।