■ রয়টার্স ■
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার দেশের ফেরা তার নিজের ওপর নির্ভর করবে। তিনি দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘ ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের দেওয়া সময়সীমা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দেরি। দেশের সবচেয়ে পুরোনো এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে কোন গ্রহণযোগ্য সংস্কার বা নির্বাচন করা অসম্ভব।’
মঙ্গলবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘শেষপর্যন্ত আমরা একটা সময়সীমা পেয়েছি, এতে আমি খুশী। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত সরকার দেশে নানা সংস্কারের কথা বলছে, যা পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলবে।’
রয়টার্সের ওই প্রতিবেদন আরও বলা হয়, গত মাস থেকে দিল্লির কাছাকাছি আশ্রয়ে রয়েছেন শেখ হাসিনা। এ সময়ে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতাকে আন্দোলনে এক হাজারের বেশি নিহতের ঘটনায় সম্পৃক্ততায় অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া অনেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্ভর করছে যে, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করবে নাকি তাদের মতো করে নির্বাচন আয়োজন করবে।’
এর আগে, গত আগস্টে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা দেশে বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে লড়াই করতে চায়।
রক্তক্ষয়ী ছাত্র বিক্ষোভের সময় শেখ হাসিনাকে রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অস্বীকৃতি জানানোর পর ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আর এর মধ্য দিয়েই সেই সময় শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায়, প্রায় ঘণ্টা খানেকের প্রস্তুতিতে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাব্কে এই প্রধানমন্ত্রী।
সোমবার রয়টার্সে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেছেন, “বাংলাদেশে ‘দেড় বছরের মধ্যেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ হওয়া উচিত’ বলে তিনি মনে করেন। তবে ‘পরিস্থিতি যাই হোক না কেন’ তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন।”
বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থানের অতীত কিছু উদাহরণ তুলে ধরেন জয়। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে সংঘটিত অভ্যুত্থানের ইতিহাসের কথাও উল্লেখ করেছেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থনের কথাও তুলে ধরেন জয়। দুই বছর পর ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে তিনি ১৫ বছর ধরে দেশ শাসন করেন।
২০০৭-০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, যদিও এ রকম নাটক আমরা আগেও দেখেছি, যেখানে একটি অসাংবিধানিক, অনির্বাচিত সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং তার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এরপর থেকে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাংলাদেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে দেখা করেন। দেশে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া প্রচেষ্টায় সামরিক বাহিনীর সমর্থন রয়েছে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, সেনাবাহিনী এই সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলেও জানান তিনি।
আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের আগে বিচার বিভাগ, পুলিশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এই সংস্কার কাজ শেষ করতে কতদিন লাগতে পারে, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।