জাপা-গণঅধিকার পরিষদ সংঘর্ষ, গুরুতর আহত নুর

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ের সামনে জাপা ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে মারাত্মক আহত হয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর। তাকে কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রাশেদ খান অভিযোগ করেছেন, ‘জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে আমাদের মিছিলে হামলা চালিয়েছে।’ সংগঠনের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পেছন থেকে জাপা ও লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে।’

জাতীয় পার্টি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে হামলা করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।

তারা বলেন, অনতিবিলম্বে গণহত্যার দায়ে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যদি বিচার না করা হয় তাহলে ছাত্র, শ্রমিক-জনতা তাদের বিচার করবে।

সন্ধ্যায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ছুটে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। রাত ৯টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে। গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা জাপা কার্যালয়ের সামনে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সড়কে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পুলিশ ও সেনাসদস্যরা উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন।

সমাবেশ শেষে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা বিজয়নগর মোড় থেকে পল্টনমুখী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা জাতীয় পার্টিকেও রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। মিছিলটি কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য আবু হানিফ জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পল্টন মোড়ে মিছিলে হামলা করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, হামলাকারীদের মধ্যে দুই-তিন শ লোক ছিলেন এবং তাতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ জড়িত ছিল। একপর্যায়ে গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা প্রতিরোধ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাশেদ খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মিছিলে ছিলেন। আহত ব্যক্তিদের তথ্য রাশেদ খানের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে।

সংঘর্ষের প্রতিবাদে গণঅধিকার পরিষদ মশাল মিছিলের ডাক দেয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রথম ধাপের সংঘর্ষ বন্ধ হলেও রাত ৮টার দিকে নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল নিয়ে আবারও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ তাঁদের বাধা দিলেও তাঁরা থামেননি।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী দাবি করেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা’ ঘটেছে। তিনি জানান, রাত সাড়ে ৮টায় কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে ৯টা পর্যন্ত সেটা হয়নি।

জাপা নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছেন। অন্যদিকে গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় জাপার লোকজনই প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে উসকানি দিয়েছেন।

রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আতিকুল আলম খন্দকার জানান, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। রাত ৯টা পর্যন্ত ধাপে ধাপে ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলেছে।

এ সময় জাপা নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে জাপা নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেয়। তৎক্ষণাৎ গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের ঘটনাস্থল ছাড়তে ১০ মিনিট সময় দেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এর মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় সেখানে ব্যাপক লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার বিকেলে রাষ্ট্র পুনর্গঠন ও ফ্যাসিবাদ নির্মূলের দাবিতে বিজয়নগর কার্যালয়ের সামনে একটি সমাবেশ করে গণঅধিকার পরিষদ। সমাবেশে আওয়ামী লীগের দোসরদের রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করা, তাদের নিবন্ধন বাতিল ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গণঅধিকার পরিষদের হামলায় আমাদের বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এখন অনেকে হাসপাতালে আছেন। 

তিনি বলেন, হামলার একপর্যায়ে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। তখন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা সরে যায়। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

জাপা মহাসচিব আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ও নিবন্ধিত দল হওয়ার পরও বারবার জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা করা হচ্ছে। পার্টি অফিসে আগুনও দেওয়া হয়েছিল। 

বর্তমান সরকার রাজনৈতিক দল ও জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে শামীম হায়দার বলেন, এই সরকার দেশ পরিচালনার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। যার কারণে বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের নিজেদের স্বার্থে বেআইনি কাজ করে যাচ্ছে।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *