:: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ::
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ নানা দাবিতে সাভারে ফের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভের ফলে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এই অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুই ঘণ্টা পর দুপুর ১টায় অবরোধ তুলে নেন শিক্ষর্থীরা।
একই দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ৩৫ মিনিট ও বুধবার পৌনে ২ ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া গত সোমবার ১০ মিনিট ও মঙ্গলবার ২০ মিনিট সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।
এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি গেইট এলাকায় অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন৷
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা যৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে রাজপথে নেমেছি। এই স্বাধীন দেশে সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে কোটার নামে এমন বৈষম্য কোনোভাবেই ছাত্র সমাজ আর মেনে নিবে না। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো- ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আজও বিক্ষোভ করছেন। এতে মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, ২০১৮ সালে জারি করা সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছি। অনতিবিলম্বে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একটি কুচক্রীমহল বারবার বলার চেষ্টা করছে বা অপপ্রচার চালাচ্ছে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে নাকি জামায়াত-বিএনপি ভর করেছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্যসচিব মাহফুজ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া না হলে প্রয়োজনে সারা দেশ অচল করে দেওয়া হবে।’