■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
রাজধানীর সরকারি সাতটি বড় কলেজের জন্য পৃথক ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
বৃহস্পতিবার ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজসহ এ সংক্রান্ত কমিটির তিন সদস্য শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই এই নাম প্রস্তাব করা হয়।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, কয়েকটি নামের মধ্যে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামটি তাদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছে। শিক্ষা উপদেষ্টাও এই নামের প্রশংসা করেছেন। তবে ছাত্ররা যেটা বলবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে।
নামকরণের যুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘জুলাই বিদ্রোহে শিক্ষার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। বিভিন্ন গ্রাফিতিতে তারা এটাকে “জুলাই ৩৬” হিসেবে উল্লেখ করেছিল। বিদ্রোহের প্রতিফলন, তাদের আত্মত্যাগ স্মরণ এবং তাদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ, আমরা বিশ্বাস করি তাদের প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাতে এই নামটি উপযুক্ত হবে।’
এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষক এক হাজারের বেশি।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে এসব কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না।
সরকারি এই সাতটি বড় কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এ জন্য ইউজিসির মাধ্যমে একটি কমিটি কাজ করছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে ইউজিসি এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকও করেছে।
আজ শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সম্ভাব্য নাম নিয়েও আলোচনা করেছে কমিটি। এর পাশাপাশি এই সাত কলেজের জন্য অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন নিয়েও আলোচনা চলছে।
এক সময় দেশের সব স্নাতক ও ডিগ্রি কলেজ পরিচালিত হত ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৯২ সালে সরকারি কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাতটি বড় সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে যেসব লক্ষ্যে এটি করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় কয়েক বছর ধরে অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
সবশেষ গত ২৬ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে শিক্ষার্থী, পুলিশসহ শতাধিক আহত হন। এর পরদিন ২৭ জানুয়ারি অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকের পর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দেন।
অধিভুক্তি বাতিলে ভর্তিসহ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে সংকটে পড়েছে কলেজগুলো। এখন শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। সে লক্ষ্যে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি।
এ ছাড়া সবশেষ আজ দুপুরে রাজধানীর মহাখালী-গুলশান-১ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তিতুমীর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণার জন্য আন্দোলন চলছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন আমরা আলাদা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা সাত কলেজ নামে থাকতে চাইনা। আমরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চাই। আর তা হবে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়।