জুলাই আন্দোলনে হামলার আসামি পেলেন সাহসী সাংবাদিক সম্মাননা

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাহসী সাংবাদিকের সম্মাননা পেয়েছেন ফরিদপুরে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শেখ ফয়েজ আহমেদ। গত ৩ আগস্ট তাঁকে সম্মাননা দেয় বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

শেখ ফয়েজ আহমেদ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ফরিদপুর জেলার সভাপতি। তিনি জেলা ক্যাব ও সমবায় ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ফরিদপুর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলা সংবাদ ও চ্যানেল এস নামের একটি চ্যানেলের সাংবাদিক।

গত বছরের ১০ অক্টোবর ফরিদপুরে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন শেখ মুজাহিদুল ইসলাম। ওই মামলার ৯৭ নম্বর আসামি শহরের খোদাবক্স রোড এলাকার শেখ মানিকের ছেলে শেখ ফয়েজ আহমেদ। এটিই জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় করা ফরিদপুরের একমাত্র মামলা।

শেখ ফয়েজ আহমেদ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের ফরিদপুর জেলা কমিটির সভাপতি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিষদের ব্যানারেও তাকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। সাংবাদিকতা পরিচয় ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত, ওই সময়ে জেলার সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা হয়। ভুক্তভোগীরা তাকে গ্রেফতারে ঝাড়ু মিছিল ও মানববন্ধন করে। সমবায় ব্যাংকের গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। পরে তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তিনি সে যাত্রা রেহাই পান। তার বিরুদ্ধে ফরিদপুর সমবায় ব্যাংক ভবনের পাঁচটি দোকান কারসাজি করে বিক্রির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা জানান, গণঅভ্যুত্থানের সময়েও তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আস্থা জানিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দেন। আন্দোলনকারীদের শিক্ষার্থীদের অনেককে তিনি শিবির ট্যাগ দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিলেন সেসময়। জুলাই আন্দোলনের বিপক্ষে তার এই বিতর্কিত ভূমিকায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হন।

জেলা সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কীভাবে এই সাহসী সাংবাদিকের নামটি এলো সে সম্বন্ধে জেলার তারা অবগত নন। তাদের কোনো মতামতও নেওয়া হয়নি। তিনি নিজেই হয়ত আবেদন করেন। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তা ছাড়া ফরিদপুর জেলা থেকে একমাত্র আবেদনকারী ছিলেন তিনি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই না করায় এমনটি হয়ে থাকতে পারে।’

ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব পিয়াল বলেন, এ খবর জানতে পেরে তারা বিস্মিত। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় অবদান রাখা সাহসী সাংবাদিকদের প্রতি অসম্মানের শামিল। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

শেখ ফয়েজ বুধবার সকালে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, সাংবাদিকতায় ২০২৪ সালে সাহসিকতাপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও চেক দিয়েছে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট।

বিষয়টি জানার পর দুপুরে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের একটি প্রতিনিধিদল জেলার জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে এ ঘটনার লিখিত প্রতিবাদ জানান। এ সময় ফরিদপুরে জুলাই আন্দোলন করা আবরার নাদিম, কাজী রিয়াজ, সোহেল রানা, মাহমুদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বিতর্কিত ব্যক্তিকে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহার করে জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা প্রকৃত সাংবাদিকদের মূল্যায়নের দাবি জানান।

এ বিষয়ে জেলার জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কীভাবে এই সাহসী সাংবাদিকের নামটি এল, সে ব্যাপারে তিনি অবগত নন। এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো মতামতও নেওয়া হয়নি। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে শেখ ফয়েজ আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *