গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মিরপুর রোড অবরোধ

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■ 

সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে দাবিতে রাজধানীর মিরপুর রোডের উভয় পাশ দখলে নিয়ে বিক্ষোভ করছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা।

শ্যামলীর শিশুমেলা মোড় অবরোধ করায় মিরপুর রোডের উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতালের) সামনে থেকে সরে গিয়ে তারা ওই মোড়ে অবস্থান নেয় আহতরা। এতে করে মিরপুর রোডের উভয় দিকের পাশাপাশি শ্যামলী থেকে আগারগাঁও সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা।

উন্নত চিকিৎসার দাবি জানালেও এ বিষয়ে কেউ ‘গুরুত্ব দিচ্ছেন না’ অভিযোগ করে শনিবার রাত ১০টার পর সড়কে নেমে আসেন পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন থাকা আহতরা।

রোববার সকালে তাদেরকে পঙ্গু হাসপাতালের দুই পাশে রাস্তার উপর বেঞ্চ, চেয়ার ও বাঁশ ফেলে আটকে রাখতে দেখা গেছে। আহতদের কেউ কেউ সড়কে বিছানা পেতে শুয়ে পড়েন। তাতে শিশু মেলা থেকে আগারগাঁও ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা শিশু মেলা মোড়ে অবস্থান নিলে মিরপুরে রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আন্দোলনকারীদের নেতা কোরবান শেখ হিল্লোল শনিবার বলেন, ‘আজকে বিদেশি ডাক্তার এসেছিল। তারা আমাদের পরীক্ষা করে একটা মতামত দিয়েছে। আমাদের মধ্যে যাদের বিদেশ পাঠানো হয়েছে, তাদের আর আমাদের শারীরিক অবস্থা একই বলে ডাক্তারদের মতামতে উঠে এসেছে।’

উন্নত চিকিৎসার দাবিতে এর আগে নভেম্বরে সড়ক অবরোধ করেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। সরকার ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে তাদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি চিকিৎসার বিষয়টিও দেখভাল করছে। তবে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের অভিযোগ, তারা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

সড়কে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন কবির হোসেন। আন্দোলনের সময় তাঁর চোখে গুলি লেগেছিল। কবিরের বাড়ি মিরপুর–১১–তে। তিনি বলছিলেন, তাঁর চোখে সমস্যা আছে।

হাসপাতালেই ছিলেন। তবে এখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাসায় গেলেই অসুখ বেড়ে যায়। হাসপাতালে এলে একটা ড্রপ ও ব্যথার ওষুধ দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর সুচিকিৎসা দরকার।

বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা বলছেন, যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদের কারও এক চোখে আঘাত, আবার কারও দুই চোখে আঘাত লেগেছে। অনেকের আঘাত গুরুতর। কিন্তু তাঁদের অনেকেই সঠিক চিকিৎসা পাননি।

আজ বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ রাস্তার মাঝে চাদর বিছিয়ে শুয়ে আছেন। রাস্তার মাঝে বেঞ্চ পেতেও বসে আছেন অনেকে।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া ধীরগতির; তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে।

এখন হাসপাতালে যাঁরা আছেন, তাঁদের চিকিৎসা ঠিকমতো করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। তাঁদের দাবি, এ জন্য সুচিকিৎসা দিতে হবে, প্রয়োজনে বিদেশে পাঠাতে হবে।

বিক্ষোভকারীদের একজন মো. দুলাল। তিনি হাতে আঘাত পেয়েছিলেন। দুলাল বলেন, তিন মাসে আগে সরকারের পক্ষ থেকে সুচিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এখন পর্যন্ত কোনো ভালো চিকিৎসা তিনি পাননি।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকারের কেউ এখন তাঁদের খোঁজখবর আর নেন না। আন্দোলনে তাঁদের অবদান রয়েছে। তাঁদের সুচিকিৎসার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে ।

এর আগে, শনিবার রাত সাড়ে ১২টার পর্যন্ত পর্যন্ত ঢাকায় জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও পুনর্বাসন কেন্দ্র’র (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে সড়ক অবরোধ করে করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। এতে ফলে আগারগাঁও ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে শিশু মেলা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশত আহত রোগী সড়ক অবরোধ করে রেখে। রাস্তার ওপর আড়াআড়ি করে বেঞ্চ রেখে তাদের অনেকে বসে পড়েন। কেউ সড়কে শুয়ে-বসে পড়েন। ক্র্যাচে ভর করে অনেকে অবরোধে অংশ নেন।তারা সবাই পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এসময় স্লোগান দিতে দেখা যায়, ক্ষমতা নাকি জনতা, জনতা, জনতা… আমার ভাইয়ের রক্ত শেষ হয়নি যুদ্ধ।

একজন প্রত্যাক্ষ দর্শী জানান,  চিকিৎসাসেবা ঠিকমতো পাচ্ছেন না এমন অভিযোগ করে রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভেতরে প্রথমে বিক্ষোভের শুরু করে  জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত একদল ব্যক্তি। এর পর রাত ১১টায় তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের সেঙ্গ যুক্ত হয় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা। এই খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর অন্যান্য হাসপাতাল ও আশেপাশের এলাকা থেকেও অনেকে এসে যক্তি হয় বিক্ষোভে।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এর আগেও চিকিৎসার দাবিতে তাঁরা রাস্তায় নেমেছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তাঁদের চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই। এমন পরিস্থিতিতে তাঁরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *