■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
জুলাই আন্দোলনের কর্মী ও তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মামুনুর রশীদ নিখোঁজ হওয়ার তিন দিন পার হয়েছে। এখনও মেলেনি তার সন্ধান।
মামুনের স্ত্রী খাদিজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীকে ছাড়া আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার সন্তান সারাক্ষণ বাবার খোঁজ করে। কেন আমার স্বামীকে গুম করা হলো? আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।
এসময় তিনি নিরাপদে স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রশাসন ও প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে মামুনের বাবা সন্তানের জীবিত ফেরার আকুতি জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নেতা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশকে আমরা গুম-খুনের বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই না। প্রশাসনকে স্পষ্ট জানাতে চাই মাওলানা মামুনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে বের করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সাবেক মূখ্য সমন্বয়ক রাফিদ এম ভূঁইয়া বলেন, মামুন ভাই গুম হওয়া মানে সরাসরি জুলাই যোদ্ধাদের ওপর আঘাত। আমরা প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিচ্ছি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় বিএনএস সেন্টার অবরোধ করা হবে।”
উল্লেখ্য, গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর তুরাগের হানিফ আলী মোড় এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন মাওলানা মামুনুর রশীদ। তিনি তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে উত্তরার রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
এ বিষয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তুরাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে মাওলানা মামুনের স্ত্রী খাদিজা বেগম।
এ সময় প্রশাসন ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নিখোঁজ জুলাই যোদ্ধা মামুনুর রশীদের পরিবারের পাশে বিএনপি
জুলাই আন্দোলনের সক্রিয়কর্মী এবং তুরাগ থানা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মামুনুর রশীদের পরিবারের পাশে বিএনপি রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সদস্য সচিব মো. মোস্তফা জামান।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মামুনুর রশীদের পরিবারের সাথে দেখা করে তার পরিবারকে আশ্বস্ত করেন এই বিএনপি নেতা।
এ সময় ডিবিপ্রধানকে ফোন দিয়ে কথা বলেন মোস্তফা জামান। ঘটনার সত্যতা ও দ্রুত সময়ে মামুনুর রশীদকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা চান। একই সময় মামুনুরের ছবি এবং মামুনুর যেখান থেকে নিখোঁজ হন, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন গ্রুপে দিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেন।
মামুনুর রশীদের পরিবারের অভিযোগ, নিখোঁজ হওয়ার দুদিন আগ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে নানা ধরনের হুমকি ও গুম করার বার্তা দিচ্ছিল কয়েকজন। তারপরই মামুন নিখোঁজ হয়ে যায়। এ ছাড়া মামুনের পরিবারকেও ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে মাওলানা মামুনুর রশীদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়।
এ সময় সবকিছু শুনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এই সদস্য সচিব বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সময় এমনটা হতো, কিন্তু বর্তমানে এই ধরনের ঘটনা আমরা কেউ মেনে নেব না। দ্রুত সময়ে মাওলানা মামুনুর রশীদ ফিরে না আসলে আমরা এর শেষ দেখে নেব। আপনারা কেউ চিন্তা করবেন না, বিএনপি আপনাদের পাশে আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সে দায়িত্ব থেকে এখানে এসেছি। আপনারা দেখেছেন- আমি তুরাগ থানার ওসি এবং ডিবিপ্রধানের সাথে কথা বলেছি। তারা এই বিষয়ে কাজ করছে। এ ছাড়া আমি আমার দলের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন গ্রুপে তার ছবি এবং খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। আশা করি, অচিরেই আমরা তার খোঁজ পেয়ে যাব।
এ সময় মাওলানা মামুনুর রশীদের বৃদ্ধ বাবা, তার স্ত্রী ও সন্তান উপস্থিত ছিল।
নিখোঁজ জুলাই যোদ্ধা মাওলানা মামুনুর রশিদকে দ্রুত উদ্ধারের দাবি জামায়াত আমীরের
উত্তরায় নিখোঁজ জুলাই যোদ্ধা মাওলানা কে এম মামুনুর রশিদকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রাহমান। একই সঙ্গে এই জুলাই যোদ্ধার নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুর রাহমান লেখেন, ‘জুলাই যোদ্ধাখ্যাত মাওলানা মামুনুর রশিদ তিন দিনেরও অধিক সময় ধরে নিখোঁজ। তার পরিবার গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। তার অবস্থান চিহ্নিত করে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, পরিবারটি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। সবকিছুর পরে আমরা তাকে দ্রুত ফেরত চাই।’