:: নাগরিক প্রতিবেদন ::
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন রাষ্ট্রপতি। শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে তাঁকে এ পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৫ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী নিয়োগ লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিভাগে ডিগ্রি অর্জন করেন সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তার আগে ১৯৮৪ সালে জজ আদালতের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৮৬ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের কিংবদন্তি আইনজীবি ছিলেন। আর মা মরহুম জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ।
শনিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পদত্যাগপত্রে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান উল্লেখ করেছেন- ‘সুপ্রিম কোর্ট বিল্ডিং এবং এর রেকর্ডসমূহ রক্ষা, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর ও জাজেস টাওয়ার রক্ষা, বিচারপতিদের শারীরিকভাবে হেনস্তা থেকে রক্ষা করা এবং জেলা জজকোর্টসমূহ ও রেকর্ড রুমসমূহ রক্ষার স্বার্থে আমাকে এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিতে হলো।’ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পর বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে একই ধরনের কারণ উল্লেখ করে অপর পাঁচ বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।
প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য পাঁচ বিচারপতি হলেন এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন।
আপিল বিভাগের একমাত্র বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম পদত্যাগ করেননি।
প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করার পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে জানানো হয়েছিল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে মো. আশফাকুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এটা নিয়ে আপত্তি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। একই সঙ্গে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তারা। তাদের প্রতিবাদের মুখে আইন মন্ত্রণলায় থেকে দাবি করা হয়, ‘এখনও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়নি!’
সাবেক প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগ দেন। তিনি ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।
এর আগে সকাল পৌনে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান বিচারপতিসহ অন্যদের পদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন। পরে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হতে থাকেন। সেখানে তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। এ সময় তাদের ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘দফা এক দাবি এক, বিচারপতির পদত্যাগ’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘শেখ হাসিনার দালালি, চলবে না চলবে না’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ বিচারপতিদের দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা দুপুর ১টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে তার পরিণতি হবে শেখ হাসিনার মতো। আমরা প্রধান বিচারপতিসহ দলবাজ বিচারপতিদের বাসভবন ঘেরাও করে পদত্যাগে বাধ্য করব। দলবাজ বিচারপতিদের সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের মূল উৎপাটন করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি শত শত শহিদের রক্তে কেনা স্বাধীনতাকে বানচাল করার জন্য অপশক্তি, পরাজিত শক্তি চেষ্টা করছে। আমরা তাদের প্রতিহত করব, প্রতিরোধ করব। এ জন্য সবাই রাজপথে নেমে আসুন।’