■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আট আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
বিচারক রবিউল আলম রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়েই নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়। পরবর্তীতে খালেদা জিয়া সরকার গঠন করলে আন্তর্জাতিক সেই চুক্তি বলবৎ রাখেন। এক এগারো সরকার এসে নাইকোর দুর্নীতির ঘটনায় শেখ হাসিনার নামে একটি মামলা দায়ের করে। পরে খালেদা জিয়ার নামেও একটি মামলা দায়ের করা হয়। শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে তার মামলাটি উচ্চ আদালত থেকে খালাস করে নেন। পরবর্তীতে একই মামলায় বেগম খালেদা জিয়া এবং অন্যান্য আসামিদেরকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার লক্ষ্যে মামলাটি চলমান রাখেন। খালেদা জিয়া কোনো দুর্নীতি করেনি। এমনকি তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি।
তিনি বলেন, এ মামলায় সেলিম ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে পিটিয়ে জোর করে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খালাস পাওয়া বাকি সাতজন হলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী জাকারিয়া হায়দার ।
রায় ঘোষণার সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী হাজিরা দেন। শহিদুল ইসলাম, ইউসুফ হোসাইন, এম এ এইচ সেলিম ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন আদালতে হাজিরা দেন। অপর আসামি কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, মীর ময়নুল হক ও কাশেম শরীফ পলাতক রয়েছেন।
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা জিইয়ে রাখা হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর হলেও আদালত আজ বেগম খালেদা জিয়াকে খালাস দিয়েছেন। আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো মামলা যে সাজানো ছিল খালাসের রায়ে তা প্রমাণিত হয়েছে।
বুধবার নাইকো মামলায় খালেদা জিয়া খালাস পাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাকসুদ উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিদের পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে গত বছরের ১৯ মার্চ একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন উপপরিচালক সাহেদুর রহমান, এ মামলার বাদী, কানাডার পুলিশ লয়েড স্কোয়েপ ও কেভিন ডুগানসহ মোট ৩৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা হয়।
এরপর ২০১৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়। ২০২৩ সালে ১৯ মার্চ কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৯ নম্বর (অস্থায়ী) বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ গঠন করেন।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।