জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া খালাস

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা বাতিল করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

এই মামলার সাজা বাতিলের আপিল শুনানি শেষে বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, সর্বসম্মতিক্রমে সবার আপিল মঞ্জুর করা হলো। সেসঙ্গে হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস দেওয়া হলো। মামলাটি ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে গণ্য হলো। যারা আপিল করেননি, এই রায় তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে সাজাপ্রাপ্ত সকলে তাঁদের মর্যাদা ফিরে পেলেন এবং তাঁরা যে নির্দোষ তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অনাকাঙ্খিত কার্যক্রমের অবসান ঘটবে।

খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। শরফুদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।

এর আগে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শেষ হয়।এ বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়।

খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর চার কার্যদিবস শুনানি শেষে রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়।

গত ৭ জানুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শুরু হয়।

গত বছরের ১১ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেন আদালত। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সারসংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত বছরের ৩ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য  ১০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত।

রায়ের পর জয়নুল আবেদীন বলেন, মামলার ‘সারবত্তা কিছুই ছিল না’। এই মামলায় সাজা দেওয়ার মতো কোনো উপাদান ছিল না। সেই মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ ৫ বছর থেকে ১০ বছর করেছেন— এটা খুবই দুঃখজনক। তখন বিচার ব্যবস্থা বলে কিছুই ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলতো. সেভাবে রায় হতো। আজকে মনে হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। এই প্রসিকিউশন ছিলো ম্যালিশাস; এটি ছিল বিদ্বেষমূলক এবং প্রতিহিংসামূলক মামলা।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এই মামলা ছিল শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জিঘাংসা। তিনি (শেখ হাসিনা) সংসদে দাড়িয়ে মিথ্যা বলতেন। বলতেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। এই রায়ে খালেদা জিয়া নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। আজকে প্রমাণিত হলো, খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ওপর অবিচার করা হয়েছিল।

দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, মোট চারটা আপিল ছিলো। আপিল বিভাগ চারটিই মঞ্জুর করেছেন। হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেছেন। সেইসঙ্গে যারা আপিল করতে পারেননি, তাদেরকেও খালাস দিয়েছেন। পুরো মামলাকেই ‘ম্যালিশাস প্রসিকিউশন’ বলেছেন আদালত।

তিনি বলেন, ‘রায়টি দুদককে জানাব। পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

এরপর বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। পরে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ-টু আপিল করেন খালেদা জিয়া।

এতিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এই মামলা করে দুদক।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *