খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন

■ নাগরিক প্রতিবেদক ■

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। একইসঙ্গে তিনি চিকিৎসা নিয়ে গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বেগম জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন তিনি।

বেগম জিয়াকে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ ছাড়া বিদেশে নেওয়ার সুযোগ নেই জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেটি উনি গ্রহণ করতে পারছেন। তবুও বিদেশে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি আছে কিনা মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা দেখেছেন। আজকেও বিদেশ থেকে এসে বিশেষজ্ঞরা তাকে দেখবেন। দেখার পরে উনাকে যদি বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন হয় বা বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় আছেন বলে মনে করেন, তখন উনাকে বিদেশে নেওয়া হবে।’ 

তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিকভাবে উনার চিকিৎসা তদারকি করছেন ও দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে যথাযথ সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।

ডা. জাহিদ বলেন, মেডিকেল বোর্ড যদি মনে করে উনাকে ‘ট্রান্সফারেবল’ (স্থানান্তরযোগ্য) এবং চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, তখনই যথাযথ সময়ে উনাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। সব প্রস্তুতি থাকলেও রোগীর বর্তমান অবস্থা এবং সর্বোপরি মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ এই মুহূর্তে নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘চিকিৎসায় সরকার সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করছে। সংকটময় মুহূর্তে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। দোয়ার কারণেই হয়ত বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমরা আশা করি।’

ডা. জাহিদ বলেন, দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তথ্য সরবরাহের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তি আছেন। আমি দলের একজন কর্মী, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, উনার স্বাস্থ্য নিয়ে ব্রিফ করব। আর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজবী স্বাস্থ্য ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে ব্রিফ করবেন। এর বাইরে অন্য কারো ব্রিফিংয়ে কান না দেওয়ার জন্য দল অনুরোধ করেছে।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সঙ্গে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে।

এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসা চলছে।

গত রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই দিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে, হাসপাতালের আশপাশে ভিড় ঠেকাতে ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই জিয়া পরিবারের শক্তি 

দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই জিয়া পরিবারের শক্তি ও প্রেরণার উৎস বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

পোস্টে তারেক জিয়া লেখেন, ‘বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য যেভাবে সহযোগিতা ও শুভকামনা জানানো হচ্ছে, জিয়া পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

তিনি লেখেন, ‘বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিকবৃন্দ ও বন্ধুগণের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা, পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের অপরিসীম ভালোবাসা ও দোয়া, সবকিছু আমাদের আবেগ ও অনুভূতিকে গভীরভাবে স্পর্শ করছে। দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই আমাদের পরিবারের শক্তি ও প্রেরণার উৎস।’

তারেক জিয়া আরও লেখেন, ‘মমতাময়ী দেশনেত্রীর দ্রুত আরোগ্যের জন্য আমরা সবাই নিরন্তর দোয়া করছি। এই কঠিন সময়ে ঐক্য, সহমর্মিতা ও সংহতির জন্য প্রতিটি মানুষের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা রইল।’

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *