এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■ 

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫ মে (সোমবার) দেশে ফিরছেন। কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি প্রায় ৪ মাস পরে দেশে ফিরবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শনিবার (৩ মে) সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ম্যাডাম কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সোমবার (৫ মে) দেশে আসবেন। তবে সময়সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এর আগে শুক্রবার (২ মে) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, চার মাস পর আগামী ৫ মে (সোমবার) লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ইনশাআল্লাহ ম্যাডাম আগামী ৫ মে সকালে দেশে ফিরবেন। আমরা যতদূর জানি ওনার সঙ্গে দুই বউমা (তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমানের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি) আসার কথা রয়েছে।

কীভাবে দেশে ফিরবেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, ম্যাডামের দেশে ফেরার ব্যাপারে কাতারের আমিরের কাছ থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সটা ওনাকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য পেয়েছিলাম সেটা এখন একটু বিলম্বিত হচ্ছে টেকনিক্যাল কারণে… সেজন্য ম্যাডাম ঠিক করেছেন ওইটা (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) যদি শেষ মুহূর্তে না পাওয়া যায় উনি বাংলাদেশ বিমানেই আসবেন।

প্রায় ৪ মাস পরে সোমবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সঙ্গে আসছেন তার দুই পুত্রবধূ-ডা. জোবাইদা রহমান এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমান।

শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) ৫ তারিখ সকালে দেশে ফিরছেন। আমরা যতদূর জানি যে, সঙ্গে উনার দুই বউমার (তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমানের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি) আসার কথা রয়েছে।

কেমন আছেন খালেদা জিয়া জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘মোটামুটি। আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে উনি ডেফিনেটলি ভালো।’

কেমন আছেন খালেদা জিয়া– জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে ডেফিনেটলি ভালো আছেন।

এদিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন ফিরোজাকে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি বলেন, ম্যাডামের বাসভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সবকিছু জানানো হয়েছে।

লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিষয়টি জানিয়ে গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি দেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার লন্ডন ও দোহার বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফেরাতে প্রস্তুতি শুরু করে।

খালেদা জিয়া ২০১৮ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনার সময় সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দেয়। তবে তিনি কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।

এরপর চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর গত ২৫ জানুয়ারি তাকে তারেক রহমানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অর্ধযুগের বেশি সময় পর এবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

মধ্যরাতে সরিয়ে দেওয়া হলো খালেদা জিয়ার ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সোমবার (৫ মে) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডন থেকে দেশে আসার ফ্লাইটে দায়িত্ব পালনের কথা ছিল এমন দুই কেবিন ক্রুকে শুক্রবার মধ্যরাতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলাম বিপোন।

বিমান সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রোববার (৪ মে) সন্ধ্যায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ২০২ ফ্লাইটটি। ফ্লাইটে খালেদা জিয়া, তার পরিবারের সদস্য ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা থাকবেন।

আগাম প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার (২ মে) দুপুরে ওই ফ্লাইটে চিফ পার্সার নিশি, ফ্লাইট পার্সার আল কুবরুন নাহার কসমিক, ফ্লাইট পার্সার মো. কামরুল ইসলাম বিপোন এবং জুনিয়র পার্সার রিফাজের নাম চূড়ান্ত করে বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগের সংশ্লিষ্ট ইউনিট। তবে গোয়েন্দা তথ্যে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এবং ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তার সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা উঠে আসায় শুক্রবার মধ্যরাতে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে দুজনের নাম বাতিল করা হয়।

ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ তাদের নাম অন্তর্ভুক্তিকরণ ও পরে ফ্লাইট থেকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, ফ্লাইটে কসমিক ও বিপোনের পরিবর্তে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট পার্সার ডিউক এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস আনহারা মারজানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ সূত্র জানায়, গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে আল কুবরুন নাহার কসমিক নিয়মিত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ফ্লাইট পরিচালনা করতেন। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে সরকারি সুবিধা ভোগের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চাকরি জীবনে তিনি ১৮ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন। শাস্তি হিসেবে একাধিকবার গ্রাউন্ডেড হয়েছেন।

অপরদিকে, জুনিয়র পার্সার কামরুল ইসলাম বিপোন দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দলের নানা কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতি বছর ১৫ আগস্ট পালনের জন্য নিয়মিত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ফুল দেওয়া, শেখ কামালের জন্মদিনে প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা এবং বিমানে শেখ রাসেল দিবস পালনের অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি।

বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম বলেন, তাদের সরানো হয়েছে এমন তথ্য আমার কাছে আসেনি। বিমানের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নানা কারণে কাউকে ডিউটি নাও দিতে পারে কিংবা রিশিডিউলিং হতে পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কারণে অনেক সময় অনেককে সরানো হতে পারে; শত শতজনকে সরানো হয়। তেমন বড় কিছু না হলেও কিংবা সামান্য কিছু পেলেই প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে তাদের সরিয়ে দিতে বলা হয়।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *