■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটময় বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসক। তিনি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন।
রাতে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন হাত নাড়াতে পারছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাতে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং তার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে পাঠান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খোঁজখবর নিয়ে রাত ১২টা ৬ মিনিটে তারা হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান। এসময় সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া বর্তমানে সিসিইউতে মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তার স্বাস্থ্যের বিষয়ে বোর্ড নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছে।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মেডিকেল বোর্ড বসেছিল। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীসরহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা তাকে দেখতে গিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার জানান, ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সকলকে দোয়া করার আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার বাদ জুম্মা রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিলের পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন বেগম খালেদা জিয়া আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং গতকাল রাতে (বৃহস্পতিবার) ডাক্তাররা বলেছেন যে তার অবস্থা শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটময়। সেজন্য আমরা দলের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রের নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য সারা দেশের জনগণের কাছে জুমার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে দোয়া চেয়েছিলাম এবং সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকে নয়াপল্টনের মসজিদে নামাজ আদায় করে আমরা সবাই আমাদের নেত্রীর রোগ মুক্তির জন্য পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া চেয়েছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দোয়া চেয়েছি আল্লাহ তায়ালার কাছে তিনি যেন ম্যাডামকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দেন, সুস্থ অবস্থায় আবার জনগণের মাঝে ফিরিয়ে এসে দেশের মানুষের কাজ করার সুযোগ করে দেযন। আমরা আবারও দেশের মানুষের কাছে তার রোগমুক্তির জন্য দোয়া করার আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই ম্যাডামের জন্য দোয়া করবেন।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, কারাভোগ করেছেন। সবশেষে তিনি অসুস্থ হাসপাতালে ছিলেন। এর আগে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনেও বিএনপি মহাসচিব দলের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
তিনি বলেন, ম্যাডাম অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে আছে। গতকাল রাতে আমি প্রায় দুইটার সময়ে ফিরেছি হাসপাতাল থেকে। তখনও ডাক্তাররা চেষ্টা করছিলেন, কাজ করছিলেন। আমি অনুরোধ করব আপনারা আশু রোগমুক্তির জন্য দোয়া করবেন, দেশবাসীদের দোয়া করার আহ্বান জানাচ্ছি আপনাদের মাধ্যমে।
এদিকে খালেদা জিয়া রোগমুক্তি ও সুস্থতায় রাজধানীসহ সারা দেশে মসজিদে মসজিদে বাদ জুম্মা দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার বিকেলে মুন্সীগঞ্জের সরকারি লৌহজং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়ন এবং খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় গণদোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। একইদিনে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুর উদ্যোগে বাদ জুমা খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনায় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মধুপুর মাদরাসায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে এয়ারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বেগম খালেদা জিয়া। রাতেই মেডিবেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী জানান, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে (চেষ্টে) ইনফেকশন হয়েছে। কেবিনে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে উনার চিকিৎসা চলছে।
দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
তিনি নিয়মিতভাবে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছেন এবং প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যেন কোনো ঘাটতি না থাকে, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা দিতে সরকার প্রস্তুত।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সময়ে বেগম খালেদা জিয়া জাতির জন্য ভীষণ রকম অনুপ্রেরণা। তাঁর সুস্বাস্থ্য দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা ও সমন্বয়ে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকার নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। গত রোববার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকেরা জানান, খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ১১৭ দিন লন্ডনে অবস্থান শেষে গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর একাধিকবার শারীরিক নানা জটিলতায় তাঁকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
