■ নাগরিক প্রতিবেদন ■
দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজা বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হবে।
নামাজে জানাজা পড়াবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি মুহাম্মদ আবদুল মালেক। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শহীদ জিয়ার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন। এর আগে দুপুর ১২টায় জরুরি বৈঠকে বসেন দলটির স্থায়ী কমিটির নেতারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম জিয়ার মৃত্যু দেশের মানুষের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি এমন সময় চলে গেলেন যখন তাকে সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল।
মঙ্গলবার ভোর ৬টায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়। দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে খালেদা জিয়ার জানাজার সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে জানাজা ও দাফনের বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদকে অবহিত করেছেন।
মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক শুরু হয় এক মিনিটি নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। আসিফ নজরুল বলেন, গোটা জাতির মতো সরকারে যারা আছেন তারাও শোকাহত। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বুধবার থেকে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আগামীকাল সাধারণ ছুটি।
সরকার জানাজা ও দাফন ঘিরে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। সভায় প্রধান উপদেষ্টা বেগম জিয়ার স্মৃতিচারণ করেন। সবশেষ সেনাসদরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলাপ হয়েছিল। তিনি সভায় সেদিনের স্মৃতিচারণ করেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, দেশের ইতিহাসে বেগম জিয়ার অবদান অবিনশ্বর হয়ে থাকবে। এমন একজন নেত্রীর চলে যাওয়াটা একটি বিশেষ মুহূর্ত। সবাই শোকাহত। সবার উচিত জানাজা ও দাফনে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
উপদেষ্টা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশ্বে বাংলাদেশের যত দূতাবাস ও হাইকমিশন আছে সেগুলোতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক বই খোলা হবে।
এদিকে দুপুরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গোটা জাতি আজ গভীর শোক ও বেদনায় আচ্ছন্ন। তাঁর ইন্তেকালে আমরা এক মহান অভিভাবককে হারিয়েছি। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে তাঁর অবদান ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে।
১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া খালেদা জিয়া দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৬০ সালে দিনাজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। খালেদা জিয়ার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ছিলেন ব্যবসায়ী। মা তৈয়বা মজুমদার ছিলেন গৃহিণী। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন তিনি। তাঁর ডাকনাম ছিল ‘পুতুল’।
১৯৬০ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন এবং ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে অংশ নেন। সে সময় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানি বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয়ের পর তিনি মুক্তি পান।
১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর তীব্র নেতৃত্ব সংকটে পড়ে বিএনপি। ঠিক সেই সময় কখনও রাজনীতিতে না আসা খালেদা জিয়া দলটিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৪ সালের ১২ জানুয়ারি সহসভাপতি হন। একই বছরের ১০ মে তিনি দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে তিনি পুনরায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে সাতদলীয় জোট গঠন করে এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। এরশাদ সরকার তাঁর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং বহুবার আটক করে। তবুও খালেদা জিয়া এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে যান, হয়ে ওঠেন ‘আপসহীন নেত্রী’।
