■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম মহসিনের তত্ত্বাবধানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এন্ডোস্কোপি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন।
এন্ডোস্কোপি রিপোর্ট অনুযায়ী তার পাকস্থলীর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মামুন জানান, শুক্রবার বিকেল ৪টায় ডা. এ কিউ এম মহসিন বেগম জিয়ার এন্ডোস্কোপি করেছেন। এতে দেখা গেছে তার পাকস্থলীর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে।
এদিকে বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন নিতে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় জার্মানি থেকে কাতারের ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নিতে কাতার সরকার জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় পাঠাচ্ছে। এটি জর্জিয়ার তিবলিসি থেকে ঢাকায় আসবে।
খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে কাতারের আমিরের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর কথা ছিল ঢাকায়। তবে কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সেটি পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর দ্রুত বিকল্প হিসেবে ভাড়া করা জার্মানভিত্তিক বেসরকারি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠাচ্ছে কাতার।
এর আগে গত জানুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তখন কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে গিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে খালেদা জিয়াকে নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফিরেছেন। দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সবশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন তারেক রহমানের স্ত্রী।
১৪ দিন ধরে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটি কিছুটা উন্নতির দিকে। হৃদ্যন্ত্রে জটিলতাও কিছুটা কমেছে। তবে অন্য সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন সফরসঙ্গী লন্ডনে যাবেন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ আনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দীন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
আরও থাকবেন হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ শামীন মাহফুজ, মো. আব্দুল হাই মল্লিক, মো. মাসুদার রহমান, ফাতেমা বেগম ও রূপা শিকদার।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সঙ্গে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসা চলছে।
গত রাত থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই দিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে, হাসপাতালের আশপাশে ভিড় ঠেকাতে ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
