■ নাগরিক প্রতিবেদক ■
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তার বিদেশযাত্রায় দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সব সময়ই প্রস্তুত আছে। প্রস্তুত থাকলেও উনার চিকিৎসাগত দিকে থেকে নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা প্রাধান্য পাচ্ছে। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকেরাও উনার শারীরিক অবস্থার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ উল্লেখ করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের যান্ত্রিক ত্রুটি যেমন ছিল, একইভাবে মেডিকেল বোর্ডও সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, ওই মুহূর্তে উনার ফ্লাই করা সঠিক হবে না। সে জন্যই উনার বিদেশ যাওয়া বিলম্বিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো শারীরিক অবস্থাই বলে দেবে যে, ওনাকে কখন বিদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে।’
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত আছে, তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায়, বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তিনি বলেন, গত ৬ বছর ধরে মেডিকেল বোর্ড প্রতিকূল পরিবেশেও খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দিয়ে আসছে এবং এখনো পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে এসব কথা জানিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তিনিই কাতারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ম্যাডামের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তক্রমে কাতারের রয়্যাল অ্যাম্বুলেন্স বাংলাদেশ আসবে। সেইভাবে তারা এখন প্রস্তুত রয়েছে। এখন মেডিকেল বোর্ড যখনই সিদ্ধান্ত জানাবে, তখনই এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসবে এবং ম্যাডামকে লন্ডন নিয়ে যাবে। সবকিছুই কাতার কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করেছে।’
জার্মানি থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনার বিষয়ে জানতে চাইলে এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জার্মানি থেকে অ্যাম্বুলেন্স…এটা ঠিক আছে। আমরা নই, কাতার কর্তৃপক্ষই জার্মানি থেকে একটি অত্যাধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের অ্যারেঞ্জমেন্টটা (ব্যবস্থা) করে দিচ্ছে। অর্থাৎ বিএনপির চেয়ারপারসন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য রয়্যাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সবকিছু হচ্ছে। এখানে আমাদের কিছু নেই।’
এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে খালেদা জিয়াকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। শনিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরের পর শাশুড়ি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে যান তিনি।
এর আগে, লন্ডন থেকে শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। বিমানবন্দর থেকে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেখানে কয়েক ঘণ্টা থেকে দুপুরে ধানমন্ডিতে বাবার বাড়িতে যান। পরে রাতে আবার হাসপাতালে যান। এ সময় তার আগমনকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
১৪ দিন ধরে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। খালেদা জিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটি কিছুটা উন্নতির দিকে। হৃদ্যন্ত্রে জটিলতাও কিছুটা কমেছে। তবে অন্য সমস্যাগুলো অনেকটাই অপরিবর্তিত।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে চিকিৎসকসহ মোট ১৪ জন সফরসঙ্গী লন্ডনে যাবেন। তারা হলেন- খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মরহুম কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ডা. মোহাম্মদ আনামুল হক চৌধুরী, ডা. ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিকী, ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, ডা. নুরুদ্দীন আহমদ, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
আরও থাকবেন হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, সৈয়দ শামীন মাহফুজ, মো. আব্দুল হাই মল্লিক, মো. মাসুদার রহমান, ফাতেমা বেগম ও রূপা শিকদার।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। ২৩ নভেম্বর জরুরি ভিত্তিতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সঙ্গে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসা চলছে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই দিকে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে রয়েছে পুলিশের উপস্থিতি। সংশ্লিষ্ট লোকজন ছাড়া অন্যদের ভিড় করতে দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে, হাসপাতালের আশপাশে ভিড় ঠেকাতে ও খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ফ্লাইটকে ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ ঘোষণা
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সের ফ্লাইটটিকে ‘ভিভিআইপি’ উল্লেখ করে শিডিউল অনুমোদন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ফ্লাইট অবতরণের ক্লিয়ারেন্সও দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি রেগুলেশন (এফএসআর) বিভাগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছে। পুরো প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সক্রিয় হওয়ায় যেকোনো সময় ‘অ্যাম্বুলেন্স বিমান’ ঢাকায় অবতরণ করতে পারে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে কাতার থেকে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসার কথা থাকলেও নির্ধারিত বিমানে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সেটি বাতিল হয়। পরে কাতার সরকারের সহায়তায় জার্মানি থেকে অন্য একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন বিমানটির ক্লিয়ারেন্স সংক্রান্ত নথি ইতোমধ্যে সরকারি সংস্থাগুলোর হাতে পৌঁছেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভিভিআইপি মুভমেন্ট হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ল্যান্ডিং থেকে টেকঅফ পর্যন্ত সব ধরনের নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় রুট ও অবতরণের সময় চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণ পাওয়া মাত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক এসএম রাগীব সামাদ বলেন, আমাদের সব ধরনের পেপারওয়ার্ক সম্পন্ন হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি শনিবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে আসার কথা ছিল। তবে যাত্রার তারিখ পরিবর্তন হচ্ছে।
