৫ ঘণ্টা পর কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

■ নাগরিক প্রতিবেদন ■

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুন পাঁচ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাত ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এর আগে, বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। ফায়ার সার্ভিস আগুনের সংবাদ পেয়ে প্রথমে সাতটি ইউনিট পাঠায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায় পাঁচ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিন দিক থেকে আগুন সীমিত করা গেছে। বাকি থাকা একটি দিকের আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে। সব ঠিক থাকলে আগামী এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবে।

মঙ্গলবার রাতে আগুনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব তথ্য জানান।

ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার খবর পান তাঁরা। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা জানাতে পারেননি তিনি।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম দোলন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট কাজ করে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে, বস্তির ঘিঞ্জি এলাকা এবং ঘটনাস্থলে তীব্র পানি সংকটের কারণে আগুন নেভাতে কর্মীদের ব্যাপক বেগ পেতে হয়।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বস্তির শতাধিক ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিদ্যুৎহীন রয়েছে কড়াইল বস্তি এলাকা। মোবাইল ফোনের আলো ও টর্চ লাইট জ্বা‌লি‌য়ে চলাচল কর‌ছেন স্থানীয়রা। ক্ষ‌তিগ্রস্ত কয়েকজন বাসিন্দাকে দেখা গেছে, যে যার যতটুকু মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন, অন্ধকার সড়ক ধরে তা নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

আগুনের কারণে ওয়ারল্যাস মো‌ড়ে আট‌কে দেওয়া হ‌চ্ছে যানবাহনগুলোকে। সড়কে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পু‌লি‌শের পাশাপা‌শি শিক্ষার্থী ও রেড ক্রিসে‌ন্টের স্বেচ্ছা‌সেবকরা কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছেন সেনাবা‌হিনীর সদস্যরাও। 

দেখা গেছে, কড়াইল ঝিলে পাম্প ব‌সি‌য়ে পাইপ দি‌য়ে পা‌নি ছিটাচ্ছেন ফায়ার ফাইটাররা। পানি সরবরাহ করছে ওয়াসার গাড়িও।

আগুনে ঘর হারানো লাভলী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সাত বছর ধরে এই বস্তিতে আছি। কিস্তিতে কেনা সব জিনিস চোখের সামনে পুড়ে গেল। এখন আমাদের পথে বসতে হবে।

রাব্বি কাজ করেন সিটি করপোরেশনে সড়ক মেরামতের। তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনসহ কড়াইল বস্তির নৌকাঘাটে থাকেন। আগুন লাগার সময় তিনি ছিলেন মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ এলাকায়। তার স্ত্রীও ছিলেন গার্মেন্টসে। কেউ ঘরে ছিলেন না। কিন্তু আগুনের খবরে বস্তিতে এসে দেখেন তাদের ঘর পুড়ে ছাই। জমানো ২০ হাজার টাকা ছিল, সেটাও পুড়ে গেছে। 

রাব্বি বলেন, ‘মোহাম্মদপুর থেকে এসে স্ত্রীর দেখা পেলেও ঘরের কিছুই পাইনি। আগুনে আমার সব শ্যাষ। এই শীতের রাতে থাকমু কই।’ 

বস্তিবাসীর আহাজারিতে আশেপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। এখনও কোনো হতাহতের খবর না এলেও আগুনে পোড়া অংশের প্রায় সবাই ‘সবকিছু’ পুড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

বস্তির বাসিন্দা সুমন আহম্মেদ বলেন, ‘আগুনের সময় বাসার বাইরে ছিলাম। আগুনের খবর শুইনা দৌড়াইয়া আইসা দেখি সব শেষ।’

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিরাপদে বাসা থেকে বের হতে পারলেও কিছুই সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারেননি বলে জানান তিনি।

ফজলু নামে আরেকজন বলেন, আগুনে ৫ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। আগুন লাগা অংশে ‘কিছুই অবশিষ্ট নেই’।

বস্তির যেসব ঘরে এখনও আগুন লাগেনি কিন্তু আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব ঘর থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে। কেউ মাথায় করে কেউ হাতে করে তাদের জিনিসপত্র বের করছেন।

শেয়ার করতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *